মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকটি বাতিল করবেন কিনা তা ভেবে দেখছেন।
কের্চ প্রণালীর কাছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার নৌবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি একথা বলেন।
কের্চ প্রণালী কৃষ্ণ সাগর ও আজভ সাগরকে পৃথক করেছে। খবর বার্তা সংস্থা সিনহুয়া’র।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি।
তবে মস্কো এই ঘটনার ব্যাপারে জানিয়েছে, ওই জলসীমায় তারা যা করেছে তা বৈধ।
হোয়াইট হাউসে ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেন, রোববার কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার ইউক্রেনের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ ও তাদের ক্রুদের আটকের ব্যাপারে তার জাতীয় নিরাপত্তা দল মঙ্গলবার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে। তিনি সেই প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনটি পেলে সেখানে কি ঘটেছিল তা জানা যাবে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘হয়তো আমি ওই বৈঠকে যাব না। আমি এ ধরনের আগ্রাসন পছন্দ করি না। আমি কারোরই আগ্রাসন চাই না।’
সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাতটি ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে’।
ট্রাম্পের সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হওয়ার আগে মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছিলেন, আর্জেন্টিনায় অবস্থানকালে ট্রাম্প পুতিনসহ বেশ কয়েকজন বিদেশী নের্তৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করবেন।
বোল্টন আরো বলেন, ‘দুই নেতার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি দুই নেতার আলোচনায় সবগুলো এজেন্ডা স্থান পাবে বলে আমি মনে করি।’
এর আগে মঙ্গলবার ন্যাটো এর ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানায়, ন্যাটোর মিত্ররা ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে অবাধে নৌযান চলাচল করতে দেয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘ইউক্রেনের নৌবাহিনীর জাহাজ ও নৌ সেনাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ রাশিয়ার নেই। ’
ন্যাটো বিবৃতিতে বলে, ‘আমরা অবিলম্বে আটক ইউক্রেনের নৌসেনা ও জাহাজগুলো ছেড়ে দেয়ার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইউক্রেনের সহায়তায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে অধিকতর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হেদার নুয়েআর্ট বলেন, ‘মস্কোর ও কিয়েভের মধ্যে সরাসরি সংঘাত এই বিপজ্জনক ঘটনা।’
যদিও ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসণের কারণে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করেছে।
এ বছরের গোড়ার দিকে রাশিয়া কের্চ প্রণালীতে একটি সেতু উদ্বোধন করে। সেতুটি ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়ার মূল ভূখ-ের যোগাযোগ স্থাপন করবে। এরপর থেকে রাশিয়া আজভ সাগর ও কার্চে প্রণালীর মধ্যে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর নজরদারি শুরু করে।
১৯ নভেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি ফেদেরিকা মোঘেরিনি বলেন, আজভ সাগরে রাশিয়ার কর্মকা- শুধু ইউক্রেনের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর পতাকাবাহী অনেক জাহাজও এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
জবাবে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নারী মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেন, ওই অঞ্চলে রাশিয়ার যে কোন ধরনের কর্মকা- চালানোর আইনগত বৈধতা রয়েছে।