আইএমএফের ঋণ বৈষম্য বাড়ায়

আইএমএফের ঋণ বৈষম্য বাড়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমলেও বৈষম্য কমছে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে এই বৈষম্য আরো বাড়বে। এমন মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আইএমএফের সময়কালে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কিভাবে প্রতিফলিত হতে পারে’ শীর্ষক সিপিডি-নাগরিক প্ল্যাটফরমের সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

আইএমএফের ঋণ বৈষম্য বাড়ায়তিনি বলেন, আইএমএফ যখন কোনো দেশে কর্মসূচি নিয়ে যায়, তখন সেই দেশের অর্থনীতির ওপর এক ধরনের কর্তৃত্ব আরোপ করে বা আরোপের চেষ্টা করে। এ কারণে যেসব দেশে আইএমএফের কর্মসূচি চালু আছে, সেসব দেশে বৈষম্য বাড়ছে। বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ

নিচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ বেশ কিছু সংস্কারমূলক কর্মসূচি শুরু করেছে। দেশের বাজেট এখন অনাথ আর আইএমএফ তার পালক পিতা বলেও দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আলোচকরা বলেন, আইএমএফের শর্ত পালন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ ঝুঁকিতে পড়ছে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাটি একক নিয়ন্ত্রণ তৈরি করেছে। কিন্তু এই অর্থায়ন পাওয়ার আগে সম্ভাব্য ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয়নি। তাই উন্নয়ন হলেও তার সুফল পাচ্ছে না দেশের সব মানুষ। উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন, দুটিই কমেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ভর্তুকি অনেক সময় ভালো হয়, আবার খারাপও হয়। বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে, তা দিয়ে সার ও ডিজেলের মতো খাতেও ভর্তুকি বাড়ানো সম্ভব।

সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অনেক সময় প্রচারের অভাবে গরিব মানুষের নজরে আসে না। সে জন্য তারা সেগুলোর সুবিধা নিতে পারে না। এ ছাড়া খাদ্য সহায়তার জন্য যত কার্ড দেওয়া হয়, তা অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

আইএমএফ যে বাড়তি কর আদায়ের বিষয়ে বলেছে, সে বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এর সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু কাদের কাছ থেকে সেই কর আদায় করা হবে, সেটাই বড় কথা। এ ছাড়া দেশে কর আদায়ের আদর্শ ব্যবস্থা নেই।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশের যেসব মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল সম্পদ লাভ করছে, সেখান থেকে কর আদায় করা উচিত।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা আইএমএফের ওপর নির্ভরশীল নই, তারা ঋণ দিতে কোনো শর্ত দেয়নি। তবে কিছু রিকোয়ারমেন্ট দেয়, যেমন ঋণে সুদ কত, কত বছরে পরিশোধ করব এসব।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আইএমএফের সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক কী? তারা সাইড অ্যাক্টর, বাজেট আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে আইএমএফের কিছু শর্ত থাকে। প্রয়োজনে হাত পাতি, দেওয়ার দায়িত্ব আইএমএফের। অনেকে বলে দাতাগোষ্ঠী, এ শব্দের আমি ঘোরবিরোধী। কারণ তারা উন্নয়ন সহযোগী, আমরা ঋণ নিয়ে থাকি এবং সুদ-আসলে পরিশোধ করি। বাজেটে উন্নয়ন সহযোগীদের অবদান মাত্র ২ শতাংশ।’

এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের দরিদ্ররা বঞ্চিত। পদ্ধতিগতভাবে তারা বছরের পর বছর বঞ্চিত হচ্ছে। আমি গ্রামে যাই সরকারি মালামাল নিয়ে, এগুলো কোথায় যায় জানি না। এটা খুঁজে বের করাও কঠিন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বড় কর্মকর্তার (অফিসার) বড় গাড়ি, বড় বাড়ি এসব জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। এখন সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধন চলছে।’

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ সামগ্রিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বাজেট বরাদ্দ অনেক কম। উন্নয়ন করতে চাইলে বড় একটি অংশকে পেছনে রেখে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। তাই আগামী বাজেটে পিছিয়ে থাকা মানুষদের গুরুত্ব দিতে হবে। কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ রাখার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা বড় বড় দালানের মানুষগুলোর গায়ে না লাগলেও সাধারণ মানুষের অবস্থা নাজেহাল। বিশ্ববাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম কমলেও দেশের মানুষ সেই সুবিধা পাচ্ছে না। আইএমএফের ঋণের শর্তপূরণে বিভিন্ন খাত থেকে ভর্তুকি তুলে দেওয়া হচ্ছে। ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পর দাম যে বাড়বে, সেটার ধাক্কাটি আসবে সাধারণ মানুষের ওপর। কৃষিতে ভর্তুকি তুলে দিলে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে

অর্থ বাণিজ্য জাতীয়