শর্ত ও অর্থের বিনিময়ে সম্প্রতি রাজধানীর কিছু এলাকার আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক করার সুযোগ দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তাদের এ সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক করার মাধ্যমে রাজউক নিজেদের পেট মোটা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট আবাসিক এলাকায় যানজট বেড়ে যাবে। হারিয়ে যেতে পারে আবাসিক এলাকার বৈশিষ্ট্য। বাসিন্দাদের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে। অন্যদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগকে পরিকল্পিত এবং সুচিন্তিত মনে করছে। তাদের দাবি, আগে অনেকেই নিজের মতো করে বাণিজ্যিক করে নিত, এবার একটা নীতিমালায় আনা হয়েছে।
আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিকে রূপান্তরের সুযোগ দিয়ে গত ৩ মে পরিপত্র জারি করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তবে বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তরের ক্ষেত্রে এসব এলাকার সড়কের প্রশস্ততা কমপক্ষে ১০০ ফুট হতে হবে। গুলশান অ্যাভিনিউ, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, বারিধারার প্রগতি সরণি এবং উত্তরা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব আবাসিক এলাকার জসীমউদদীন অ্যাভিনিউ, শাহজালাল অ্যাভিনিউ, ঈশা খাঁ অ্যাভিনিউ এই সুযোগ পাবে। রাজউকের আওতাধীন অন্যান্য এলাকাও শর্ত মেনে বাণিজ্যিক করা যাবে।
গুলশান, বনানী, বারিধারা (জে ব্লক বাদে) আবাসিক এলাকায় আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তনের ফি কাঠাপ্রতি গুনতে হবে ১ কোটি টাকা। আর বারিধারা ‘জে’ ব্লক এবং উত্তরা (প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব) আবাসিক এলাকায় এই ফি কাঠাপ্রতি হবে ৫০ হাজার টাকা।
এসব এলাকায় ইতোমধ্যে যারা বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন, তাদেরও পরিপত্র জারির ছয় মাসের মধ্যে পরিপত্র অনুযায়ী বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তর হতে হবে। নির্ধারিত সময়ে প্লটের ধরন পরিবর্তনের আবেদন না করলে রাজউক আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন, সিদ্ধান্ত থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে রাজউক বিপুল অর্থ আয়ের একটি পথ তৈরি করেছে। এটি রাজউকের অর্থলোভী ভাবনা।
ইকবাল হাবিব বলেন, রাজউক তাদের মাস্টার প্লানে ঠিক করে দিয়েছে, কোন এলাকা আবাসিক হবে, আর কোন এলাকা বাণিজ্যিক হবে। এর মধ্যে আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘রাজউক অর্থলোভী মানসিকতার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ বাণিজ্যিক করতে গেলে তারা পয়সা পায়। রাজউক অর্থলোভী সংগঠন হওয়ার কথা নয়, রাজউক ছিল একটা রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান। রাজউক এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান, অর্থলোভী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে এসব ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে এই নগরীকে সবচেয়ে কঠিন অবস্থায় ফেলেছে। তাদের মূল কাজ ফাইল অনুমোদন দেওয়া; সেটা পারছে না। এমনকি অনুমোদন অনুযায়ী ভবন হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারছে না। উপরন্তু আবাসিক এলাকাকে ক্রমাগতভাবে বাণিজ্যিক করে অনাবাসিক একটা অবস্থা তৈরি করেছে। ফলে শিশুরা হেঁটে স্কুলে যেতে পারছে না। নারীরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে না। এই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এটি অবশ্যই অন্যায়।’
এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘এটা করার জন্য একটি কমিটি ছিল। তারা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, রাজউকের প্রতিনিধি, প্লানার্স এবং প্রকৌশলীসহ আবাসন খাতের সবার মতামত নিয়ে এটা করেছে। এমনকি বাড়ির মালিকদের সংগঠনের মতামতও নেওয়া হয়েছে। যেহেতু কিছু লোক এসে নিজেদের মতো এই কাজগুলো করিয়ে নিত, এখন আর সেটি পারবে না।’
যানজট সৃষ্টি হবে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু ১০০ ফুট সড়ক থাকাসাপেক্ষে এই সুযোগ দিয়েছি। কাজেই এখানে যানজট সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, আগে যে যার মতো করে আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক করত। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেটি বন্ধ হয়েছে।