প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ

প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ

দুয়ারে কড়া নাড়ছে কোরবানির ঈদ। পবিত্র এ উৎসব উদযাপনে চলছে নানা প্রস্তুতি। দেশে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের জাতীয় ঈদগাহে। এজন্যই প্রস্তুত হচ্ছে ময়দানটি। এরই মধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ। কাজ ঠিকমতো হয়েছে কি না, তা দেখার পাশাপাশি সাজসজ্জায় এখন পড়ছে তুলির শেষ আঁচড়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুতির দায়িত্বে ঢাকা সিটি করপোরেশন। করপোরেশন ভাগ হওয়ার পর ঈদগাহ ব্যবস্থাপনার কাজটি করছে দক্ষিণ সিটি। করপোরেশনের অঞ্চল-১ প্রকৌশল বিভাগের আওতায় ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছে পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্স নামের ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান। ১৬ বছর ধরে ঈদগাহ মাঠের সাজসজ্জার দায়িত্ব পালন করছে তারা। দরপত্রে ৮০ লাখ টাকা দর দিয়ে এই কাজ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। লাখো মুসল্লির নামাজ আদায় নির্বিঘ্ন করতে গত ৫ জুন থেকে মাঠ প্রস্তুতির বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়।

গতকাল রোববার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সরেজমিন দেখা যায়, বিশাল জায়গাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। বৃষ্টি ও রোদ থেকে মুসল্লিদের রক্ষায় ত্রিপল টানানো হয়েছে। পানিরোধক শামিয়ানা দিয়ে ওপরের ছাউনি প্রস্তুত করা হয়েছে। ভেতরে নামাজের জায়গা, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি এবং সাদা কাপড় দিয়ে সজ্জিত করার কাজও শেষের দিকে। স্থাপন করা হয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য ঈদগাহজুড়ে নিরাপত্তায় রয়েছে সিসি ক্যামেরা। কদম ফোয়ারার সামনে ঈদগাহের প্রধান ফটকের শোভা বাড়াচ্ছে নান্দনিক তোরণ। সেখানে লেখা ‘চারিদিকে আজ খুশির জোয়ার সবাই গাইছে গীত, এসেছে ধরায় মুসলিম জাহানের প্রিয় কোরবানির ঈদ।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ভেতরে ৩৫ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। এর আশপাশের সড়কেও ঈদের নামাজ আদায় করেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। সাধারণত রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঈদগাহের জামাতে অংশ নেন। এ কারণে নিরাপত্তাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মাঠ প্রস্তুত করা হয়।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এবার অতি গুরুত্বপূর্ণ ২৫০ পুরুষ ও ৮০ জন নারীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ময়দানের ভেতরে ৩৫ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। সাড়ে ৩ হাজার নারীর জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকছে। এ ছাড়া ১৫০ মুসল্লি যেন একসঙ্গে অজু করতে পারেন, তারও ব্যবস্থা থাকবে। পুরুষদের জন্য ঈদগাহ ময়দানে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০টি বড় কাতার করা হতে পারে। এ ছাড়া নারীদের জন্য আরও ৫০টি ছোট কাতার করার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈদগাহজুড়ে শামিয়ানার নিচে সিলিং ফ্যান থাকবে ৫৫০ থেকে ৬০০টি, স্ট্যান্ড ফ্যান ১৫০টি, মেটাল লাইট ৪০টি ও টিউব লাইট ৭০০টি। পাশাপাশি খাবার পানির ব্যবস্থা, প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বলেন, ময়দান প্রায় প্রস্তুত। সব কাজই শেষের দিকে। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ লোক মাঠ প্রস্তুতির কাজ করছেন। আশা করছি, আবহাওয়া ভালো থাকলে ঈদুল আজহার জামাতও সুন্দরভাবে পড়ানো হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের কালবেলাকে বলেন, আগামী মঙ্গলবার সার্বিক প্রস্তুতি সরেজমিন পরিদর্শন করবেন ডিএসসিসির মেয়র। এরই মধ্যে নিরাপত্তাসহ সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি।

ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাতের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদন করতে গত ২১ জুন সিটি করপোরেশনের সভা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঈদগাহ ব্যবস্থাপনা ছাড়াও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম গতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আগামী ২৯ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত তাদের কেউ ছুটি নিতে পারবেন না।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সাধারণত জাতীয় ঈদগাহেই ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে দুর্যোগ হলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হবে প্রধান জামাত।

জাতীয়