কিশোর গঞ্জপ্রতিনিধি
বৃষ্টি উপেক্ষা করে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ঈদুল আজহার ১৯৬তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টি হলেও ব্যাপক উপস্থিতি ছিল মুসল্লির। তবে মাঠে পানি জমায় অনেকেই নামাজ আদায় করেছেন মাঠের পাশের সড়কে।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় শুরু হয় ঈদের জামাত। এতে ইমামতি করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ।
এই জামাতে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিশিষ্টজনরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
ঈদ জামাতকে ঘিরে নেয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ছিল দুই প্লাটুন বিজিবি।
এর আগে সকাল থেকে মুসল্লিরা আসতে থাকেন ঈদগাহের দিকে। প্রতিবছর ঈদের জামাতে এখানে লাখো মানুষের ঢল নামে। বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়, এই বিশ্বাস থেকে প্রতি বছর শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে অংশ নেন দূর-দূরান্তের মুসল্লি।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ভৈরব-ময়মনসিংহ রোডে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল নামে দুটি ট্রেন চালু ছিল।
চরশোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা মশিউর রহমান নাদিম জানান, সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হয়। তারপরও অনেকেই ছুটে এসেছেন এখানে নামাজ পড়তে। বৃষ্টিতে মাঠে পানি জমায় অনেকেই মাঠ থেকে বেরিয়ে নামাজ আদায় করেছেন পাশের মসজিদ এবং মাঠের পাশের সড়কে।
কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ঈদুল আজহার জামাতকে ঘিরে নেয়া হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব, বিজিবির পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তার স্বার্থে মাঠে আর্চওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার, ড্রোন ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরাসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। এছাড়া দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ছিল।
শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই ঈদগাহে ১৯৬তম ঈদুল আজহার নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে সব ব্যবস্থায় নেয়া হয়েছিল। দূরের মুসল্লিদের জন্য ঈদের দিন সকালে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করে দুটি বিশেষ ট্রেন।
ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। ওই হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। ঘটনাটির পরও ঐতিহাসিক এ ময়দানের ঈদ জামাতে মুসল্লি সমাগমে ভাটা পড়েনি। যদিও করোনার কারণে মাঝে ২০২০ ও ২০২১ সালে এই মাঠে ঈদ জামাত হয়নি।
জনশ্রুতি আছে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের সেই জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত হন। ফলে ‘সোয়া লাখে’র অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।
১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। এই মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে, প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।