নগরীর খাতুনগঞ্জে হলুদ-মরিচ ক্রাসিং মিলের আড়ালে চলছে ভেজাল মসলার রমরমা বাণিজ্য। মসলা তৈরিতে আটা-ময়দা-ভূসির সঙ্গে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রং ও রাসায়নিক দ্রব্য। বিক্রির উদ্দেশ্যে এসব অস্বাস্থ্যকর মসলা পাঠানো হচ্ছে নগরীর বিভিন্নস্থানসহ জেলা-উপজেলাগুলোতেও। প্রশাসনের একের পর এক অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না তাদেরকে।
সূত্র জানায়, নগরীর পাইকারি মসলার বাজারে চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত আমদানির পরও ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। আর এ সুযোগে মসলার কারবারের সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় মরিচ, হলুদ, ধনিয়া, জিরাসহ মসলার নানা ভেজাল উপকরণ তৈরি করে মসলার গুড়ায় রং ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো আটা-ময়দার গুড়া মিশিয়ে দেয়। আর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভেজাল হলুদের গুঁড়া ২৪০, মরিচের গুঁড়া ৫২০ এবং ধনিয়ার গুঁড়া ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। অনেক সময় এর চেয়েও সস্তায় বিক্রি করা হয়। নি¤œ আয়ের মানুষরাই এসব মসলার প্রধান ক্রেতা। এছাড়া এসব কারবারের সাথে জড়িতরা কমিশনের ভিত্তিতেও নগরীর বিভিন্ন হোটেল-রেঁস্তোরা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বাবুর্চিদেরও দিয়ে থাকেন বলে জানা যায়।
জানা যায়, নগরীর কোতোয়ালী, বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কর্ণফুলী নদীর তীরসংলগ্ন এলাকায় অর্ধশতাধিকের উপরে ভেজাল ক্রাসিং মিল কারখানা গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না এসব অসাধু চক্রকে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) খাতুনগঞ্জের সোনা মিয়া মার্কেট এলাকায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক অভিযানে ‘আলম ক্রাসিং মিল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে পঁচা, নষ্ট মরিচের সঙ্গে রং মেশানোর সত্যতা মিলে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে গত মাসের (জুন) ২০ তারিখও সিলগালা করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির মালিক লিখিতভাবে প্রশাসনকে ভেজাল মসলার কারবারে আর জড়িত হবে না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি ভেজাল মসলা উৎপাদন ও বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, ২০ জুন অভিযান চালানো হলে ক্রাসিং মিলে ভেজাল মসলা পাওয়া যায়। এ অপরাধে ওই মিল মালিককে জরিমানা করা হয় এবং মিলটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। মিল মালিক জরিমানা পরিশোধ করায় এবং এ ধরনের কাজ পুনরায় না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়ায় মিলটি খুলে দেয়া হয়। কিন্তু আজ (গতকাল) দেখলাম তারা আবার ভেজাল মসলা উৎপাদন ও বিক্রি করছে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি নানা অপরাধে আরও চারটি খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
তাছাড়া চলতি বছর ২৩ মে চাক্তাই এলাকার জসিমের ক্রাসিং মিলে অভিযান চালিয়ে ক্ষতিকর রং ও রাসায়নিক পদার্থ মেশানো ১৫ মন হলুদ, মরিচ, ও ধনিয়া জব্দ করা হয়। এসব ভেজাল মসলা বাজারজাতের অভিযোগে কারখানা মালিকসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গত বছরের ৩ মার্চ কোতোয়ালী থানার আছাদগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি কারখানা থেকে ৩৫০ মন ভেজাল হলুদ, মরিচ ও ধনিয়ার গুঁড়াসহ বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল জব্দ করে র্যাব। তখনও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে এসব ভেজাল মসলার কারবারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আরো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, মসলায় ভেজালের ঘটনা আজকে নতুন না। প্রতিবছর প্রশাসনের অভিযানে এসব ধরা পড়ে। শুধু মসলা নয়, খাদ্যে যারা ভেজাল করে তাদেরও প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া উচিত।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম মহিউদ্দিন বলেন, খাবারে ভেজালের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।’