১২ জুলাই এক দফার ঘোষণা দেবে সরকারবিরোধীরা সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে চিঠি

১২ জুলাই এক দফার ঘোষণা দেবে সরকারবিরোধীরা সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপিতে চিঠি

আগামী ১২ জুলাই বুধবার রাজধানীতে সমাবেশ করে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা করবে বিএনপি। ওইদিন বেলা ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে মাইক ব্যবহার ও সার্বিক নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল শনিবার বিএনপির দফতর থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত এক বছর ধরে সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে ১০ দফা দাবি এখন এক দফায় রূপ নিতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, এক দফার পাশাপাশি বিএনপি একাধিক কর্মসূচিও ঘোষণা করবে। সেই কর্মসূচি অপেক্ষাকৃত কঠোর হবে। এ ক্ষেত্রে ঘেরাওসহ একাধিক শক্ত কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।

গত কয়েক দিন বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোটের সাথে বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, কেউ কেউ আবারো সভা-সমাবেশের মতো সাধারণ কর্মসূচির কথা বললে তা নাকচ হয়ে যায়। বিএনপির তরফ থেকে বলা হয়েছে, একই কর্মসূচিতে তারা আর যেতে চায় না। শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে।
এক দফার আন্দোলনের দিনক্ষণের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছে, আমরা যুগপৎ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত দলগুলোর সাথে আলোচনা করছি। সব দলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে অতি শিগগিরই চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, এবারের আন্দোলন হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলন। এই আন্দোলন দেশের সব মানুষ সম্পৃক্ত হবে এবং জনগণ তার অধিকার আদায় করে নেবে।
এ দিকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ঘোষণা একমঞ্চ থেকেই চায় যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলো। বিএনপির সাথে অনুষ্ঠিত গত তিনটি বৈঠকে এই দাবি জানান তারা। জোট শরিকদের দাবি, একমঞ্চ থেকে ঘোষণা দেয়া হলে যুগপতের জোটের মধ্যে যে ঐক্য অটুট আছে- দেশবাসীর কাছে সেই বার্তা যাবে। এর ফলে জনগণও ভরসা ও সাহস পাবে। এতে করে তারা আরও ব্যাপক হারে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবে। তবে এক দফার এই ঘোষণা একমঞ্চ না যুগপৎভাবে আসবে- সে ব্যাপারে শরিকদের এখনো কিছু জানায়নি বিএনপি। যদিও এখন পর্যন্ত নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে এই ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।

একদফা আন্দোলনের দিনক্ষণ ও নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গত বুধবার জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, পরদিন বৃহস্পতিবার ১২ দলীয় জোট এবং শুক্রবার গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) লিয়াজোঁ কমিটির সাথে বৈঠক করেছে দলটি। বৈঠকে প্রত্যেকেই একমঞ্চ থেকে অভিন্ন এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি এসব বৈঠকে একদফা আন্দোলনের কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় সমাবেশ ও ঘেরাওয়ের কথা ভাবছে জানিয়ে আরো কী কী কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে জোট নেতাদের সেই প্রস্তাবনা দেয়ার আহ্বান জানায় দলটি। তখন কেউ কেউ ঢাকায় অবস্থান ধর্মঘট, ‘চলো চলো ঢাকা চলো’, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ঘেরাও, গণভবন ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির কথা বলেন। কেউ কেউ আবারো জেলা-বিভাগীয় সভা-সমাবেশের মতো সাধারণ কর্মসূচির কথাও বলেন। বিএনপির তরফ থেকে তখন বলা হয়, একই কর্মসূচিতে তারা আর যেতে চায় না। এবার শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে।

এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচির বিষয়ে তিন জোটের তিনজন নেতা বলেন, বৈঠকে নতুন কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা ঢাকাকেন্দ্রিক এবং ঢাকার বাইরে জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচির প্রস্তাব করেছি। তবে বিএনপি যেহেতু বড় দল, সে কারণে কর্মসূচি প্রণয়নের বিষয়টিও তাদের ওপর দিয়েছি। তারাই কর্মসূচি ঠিক করবেন। আমরা সহায়ক হিসেবে সেসব কর্মসূচি সাধ্যমতো পালনের চেষ্টা করব।
যুগপতের জোটের এক নেতা বলেন, ফাইনালি ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে বিরোধী দলের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সরকার বা তৃতীয় পক্ষ যাতে সহিংসতার দিকে নিয়ে যেতে না পারে- সে ব্যাপারে বিএনপিকে সাবধান থাকার কথা বলা হয়েছে।

আগামীকাল সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বিএনপির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনে নামে বিএনপি ও মিত্ররা। এখন পর্যন্ত গণমিছিল, গণ-অবস্থান, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রার মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে তারা।

এ দিকে আন্দোলনের অভিন্ন একদফার পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা ঘোষণা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। মূলত বিএনপির ২৭ দফা ও গণতন্ত্র মঞ্চের ৩৫ দফার আলোকে এই রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩১ দফা একটা খসড়া রূপরেখা প্রণয়নও করেছে বিএনপি।

জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনবিষয়ক একটি প্রতিনিধি দলের ৮-২৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা তাদের সফর চলাকালেই সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার পক্ষপাতি। আর একদফা ঘোষণার সাথে সাথে নতুন যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, তা অপেক্ষাকৃত কঠোর হবে। বিএনপির টার্গেট এবার রাজধানী ঢাকা। ঢাকাকে ঘিরে সিরিজ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়া হতে পারে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতারভাবে এই আন্দোলন চলবে।

রাজনীতি