রাজধানীতে আগামীকাল বৃহস্পতিবারের ক্ষমতাসীন ও সরকারবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি শান্তি সমাবেশ ও মহাসমাবেশ ঘিরে জনমনে ব্যাপক উৎকণ্ঠা চলছে। এর মধ্যেই নিজ নিজ কর্মসূচি সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে ঢাকায় জড়ো করার পরিকল্পনাও নিয়েছে উভয় পক্ষ। এ লক্ষ্যে সমাবেশ-মহাসমাবেশের ভেন্যু হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে সরকারি ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে। একই স্থানে দুই পক্ষের কর্মসূচি পালনের অনুমতি চাওয়ার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া না হলেও এ বিষয়ে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে
আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিশাল শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে ঢাকাকে নিজেদের দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলের তিন সহযোগী সংগঠনের ওই সমাবেশে বড় ধরনের শোডাউনের পাশাপাশি বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও অরাজকতা ঠেকাতেও নানা পরিকল্পনা চলছে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পাহারা বসানো ছাড়াও গোটা রাজধানীতে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী।
গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর, পার্শ্ববর্তী জেলা ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের যৌথ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এ-সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপি খালি মাঠ পেলে সংঘাতে জড়াবে। সেই প্রস্তুতি তারা নিচ্ছে। আমরা কোনো সংঘাত চাই না। তবে সংঘাত যারা করবে, তাদের প্রতিহত করব। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভার প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন।
ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা বলছেন, সরকারের ওপর চাপ বাড়ানো এবং বিদেশিদের কাছে জনসমর্থন দেখানোর লক্ষ্যে বিএনপি হয়তোবা বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপি সুযোগ পেলে সরকার পতনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা অচল করার মতো পদক্ষেপও নিতে পারে তারা। এই কারণেই রাজপথ নিজেদের দখলে রাখতেই তিন সহযোগী সংগঠনের শান্তি সমাবেশ ঘিরে বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি চলছে তাদেরও।
এদিকে, বিএনপির মহাসমাবেশের দিনটিতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ আয়োজনে ওই শান্তি সমাবেশে কয়েক লাখ নেতাকর্মী সমাগমের টার্গেট নেওয়া হয়েছে।
এ কারণে সমাবেশটি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের বদলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজনের চিন্তাভাবনা চলছে। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো আবেদনে অবশ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান না হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেট এলাকার জন্য সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ দুটি স্থানের যেটিতে অনুমতি মিলবে, সেখানেই সমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা বিভাগের সব জেলা থেকে সহযোগী সংগঠন ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবারের শান্তি সমাবেশে যোগ দেবেন। তবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে সমাবেশে না গিয়ে সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। কোথাও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল সমকালকে বলেছেন, শান্তি সমাবেশে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকেই পাঁচ-সাত লাখ নেতাকর্মী আসবেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের মতো ব্যস্ত এলাকায় এত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর স্থান সংকুলানে সমস্যা হতে পারে। এ কারণে বিকল্প ভেন্যু হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। কোথায় অনুমতি দেওয়া হবে, সেটি মেট্রোপলিটন পুলিশের সিদ্ধান্তের বিষয়।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু জানান, ঢাকা মহানগরসহ এই বিভাগের ১৭টি জেলা থেকেই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশে যোগ দেবেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগেরই এক লাখ নেতাকর্মী আসবেন। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী সমবেত হবেন। এই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর জায়গা করে দিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
বিএনপিও বিকল্প ভেন্যু হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছে। একই দিন ক্ষমতাসীন ও সরকারবিরোধীদের পক্ষ থেকে একই স্থানে সমাবেশের অনুমতি চাওয়ায় কৌতূহল দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত ডিএমপি থেকে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
ক্ষমতাসীন দলের তিন সহযোগী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে শান্তি সমাবেশটি আগামীকাল বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন বিএনপির মহাসমাবেশ থাকায় সকাল থেকে দিনভর রাজপথ দখলে রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সরকার সমর্থকরা। তারা বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে জড়ো হবেন শান্তি সমাবেশস্থলে। দুপুর ১টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের পর বিকেল ৩টায় শান্তি সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের তারুণ্যের সমাবেশ থেকে বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই দিন বিএনপির মিত্র অন্য কয়েকটি জোট ও দল যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে পৃথক মহাসমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেয়। এর এক দিন পর রোববার রাতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের যৌথ শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অবশ্য এর আগে কর্মসূচিতে দুই দফা পরিবর্তন আনা হয়। প্রথমে যুবলীগের ঢাকা বিভাগীয় তারুণ্যের জয়যাত্রা সমাবেশ পিছিয়ে ২৪ জুলাইয়ের বদলে ২৭ জুলাই দুপুর ২টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে অনুষ্ঠানের কথা জানানো হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের নির্দেশনায় সেটিকে শান্তি সমাবেশ নাম দিয়ে আয়োজক হিসেবে যুবলীগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগকে যুক্ত করা হয়।