নিজস্ব প্রতিবেদক
মহাসমাবেশের পর আবার আজ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখগুলোয় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা। রাজধানীর নয়াপল্টনে গতকাল বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বর্তমান ‘সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের’ এক দফা দাবিতে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সাথি গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা ৩৬টি রাজনৈতিক দল একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বলেছেন, যদি নিজেদের ভালো চান, এখনো সময় আছে এক দফা মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন। কারণ সমগ্র বাংলাদেশ আজ জেগে উঠেছে। আর যদি পদত্যাগ না করেন, এ দেশের মানুষ আপনাদের পতন ঘটিয়েই ছাড়বে। গ্রেফতার দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই- আপনারা বর্তমান অবৈধ সরকারের বেআইনি আদেশে কাজ করবেন না। আইনের শাসন মেনে চলুন। অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেফতার করবেন না। মহাসচিব বলেন, আজকে সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। দেশের প্রতিটি সেক্টর আজ ধ্বংস করে দিয়েছে। গত ১৪ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার করেছে এ সরকারের লোকেরা। আজ মানুষের কোনো অধিকার নেই। সবকিছু কেড়ে নিয়েছে এরা। বিশেষ করে নির্বাচনব্যবস্থা একেবারে শেষ করে দিয়েছে। ফলে আমরা সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একমত হয়ে এই এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। দাবি আদায় না করে আর ঘরে ফিরে যাব না। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অডিও বক্তব্য শোনানো হয়। বেলা ২টায় বক্তৃতা শুরু হলেও সমাবেশ শুরু হয় তার আগে থেকেই।
সকাল ৯টার মধ্যেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের সমাবেশস্থলসহ আশপাশ এলাকা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবারই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে আসা শুরু করেন। সমাবেশের পরিধি দুপুরে আরামবাগ, ফকিরাপুল, কাকরাইল, শান্তিনগর, দৈনিক বাংলা, পল্টন মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। সমাবেশ চলাকালে দুই দফা বৃষ্টি নামলেও অব্যাহত থাকে সমাবেশ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভিজে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মুখরিত করে রাখেন পুরো এলাকা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় শুরু হয় মঞ্চ নির্মাণ কাজ। ৯টি ট্রাক দিয়ে করা হয় মহাসমাবেশের ভ্রাম্যমাণ মঞ্চ। আশপাশে লাগানো হয় ২ শতাধিক মাইক। টানা এক বছর ধরেই সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, বিভাগীয় গণসমাবেশ, পদযাত্রা, তারুণ্যের সমাবেশসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালনের পর গতকাল ঢাকায় মহাসমাবেশ করল বিএনপি। সারা দেশের বিভিন্ন জেলা, মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাএদলের নেতা-কর্মীরা পুলিশি তল্লাশি, গ্রেফতার, হয়রানিসহ নানা রকমের বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে মিছিলসহকারে সমাবেশে যোগ দেন।
মহাসমাবেশের প্রধান অতিথি আরও বলেন, এ মহাসমাবেশ বাংলাদেশের পরিবর্তনের মাইলফলক। প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে বেআইনিভাবে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। সংবিধান অনুযায়ী আইনের শাসন মেনে কাজ করেন। গ্রেফতর, হয়রানি বন্ধ করুন, কারাগারে যাদের আটক রেখেছেন তাদের মুক্তি দিন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ মানুষের হয়ে যিনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেন, সেই তারেক রহমানকে বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে, অত্যাচার করে এ দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে অবৈধভাবে সাজা দিয়ে কারাবন্দি করেছে।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম ও মহানগরী উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের পরিচালনায় এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায়চৌধুরী, আহমেদ আজম, আলতাফ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলাম, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কৃষক দল সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দল সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযোদ্ধা দল সভাপতি সাদেক খান প্রমুখ বক্তব্য দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাঁকে আজ অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। কারণ তিনি হলেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা। আর তাঁর সন্তান তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত রাখা হয়েছে। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আজ মানুষ দুই বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারে না। জিনিসপত্রের দামের কারণে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। আজ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ নাকি আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অথচ বিদ্যুৎ নেই। কিছুদিন পরপরই বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। আজ প্রবাসীরা কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠায়। আর সরকার তাদের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে। এরা লুটেরা সরকার। এরা অর্থনৈতিকভাবে দেশকে পঙ্গু করে দিয়েছে। গত ১৪ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার করেছে এ সরকারের লোকেরা। দেশের নির্বাচনব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে। ঢাকা ১৭ আসনে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণ জানে এ সরকার ভোটচোর। তাই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাভ নেই। তিনি বলেন, আমাদের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য আমরা ৩৬ দল একসঙ্গে আন্দোলন করছি। এর বাইরেও যারা আছেন তারাও বলেছেন এদের (আওয়ামী লীগ সরকারের) অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আমরা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব শরিক দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। যে বিচারব্যবস্থা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত, সেই ন্যায়বিচার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, এ সরকার বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারও যেনতেন একটি নির্বাচন করতে চায়। আজ সরকারের অপকর্মের জন্য র্যাবসহ অনেকের বিরুদ্ধে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে; যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।