নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের ইতিহাসে এবার রেকর্ডসংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গত বছরের ২৮১ জনের মৃত্যুকে ছাড়িয়ে গেছে এবার মৌসুমের শুরুতেই। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা শঙ্কা বাড়াচ্ছে দেশজুড়ে। গতকাল ডেঙ্গুজ্বরের থাবায় ১০ জনের মৃত্যুতে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৩-তে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দুই দশকের বেশি সময় ধরে ডেঙ্গু বাংলাদেশে বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০০০ সালের পর থেকে প্রতি বছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন। করোনা মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়। করোনা মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে ১ লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ওই বছর সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মারা যান ১৭৯ জন। গত বছর সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারায় ২৮১ জন। এ বছর আগস্ট মাসের শুরুতেই ডেঙ্গুতে ২৮৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। প্রতি বছর রেকর্ড ভেঙে এডিস মশা কেড়ে নিচ্ছে শত শত মানুষের প্রাণ। মশার কামড়ে মায়ের কোল শূন্য হচ্ছে, প্রিয়জন হারাচ্ছে মানুষ।
গতকাল আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ হাজার ১০১ জন, ঢাকার বাইরের বাসিন্দা ১ হাজার ৪৮৮ জন। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত হলেন ৫৯ হাজার ৭১৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯ হাজার ২১০ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৫০ হাজার ২২৩ জন।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আক্রান্তরাই বেশি মারা যাচ্ছেন। যাদের একবার ডেঙ্গু হয়েছিল তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ডেঙ্গুর ধরনে পরিবর্তন এসেছে। টেস্টে ডেঙ্গু নেগেটিভ এলেও ক্লিনিক্যাল সিম্পটম দেখে ট্রিটমেন্ট করতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো টেস্ট ১০০ শতাংশ পজিটিভ আসে না। তাই ডেঙ্গু টেস্টে নেগেটিভ হলেও কারও যদি লক্ষণ থাকে, সিবিসি, প্লাটিলেট রিপোর্ট দেখে ডেঙ্গু ধরে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত সচেতনতা ও মশক নিয়ন্ত্রণে আরও জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৩৮ হাজার ১১১ জন এবং নারী ২১ হাজার ৬০৫ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি হলেও নারীরা বেশি মারা গেছেন। ডেঙ্গুজ্বরে ১৫৭ জন নারী এবং ১২৬ জন পুরুষ মারা গেছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৩৮০ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২ হাজার ২৭০ জন। ঢাকার বাইরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।
রাজশাহী থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। আগে বেশির ভাগ রোগীই ছিল রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার। তবে সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশই রাজশাহীর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজশাহীতেও ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ এ ডেঙ্গুর প্রকোপ। ফলে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে রাজশাহীতেও।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, চলতি ডেঙ্গু মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৩৩৫ জন ডেঙ্গু রোগীকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন রোগী। আর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ২৬৫ জন। এর মধ্যে ১০৪ জনই রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা। আর বাকিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, বেনাপোল ও শার্শাজুড়ে বিরাজ করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৮ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। নিজ নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও আটজন। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। ৩ আগস্ট ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পাঁচজন রোগী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. লক্ষ্মীন্দর দাস জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্বর দেখা যাচ্ছে। তবে সব রোগী ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত নন।