বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানির বাজার বড় হচ্ছে। রপ্তানি বৈচিত্র্যময় করার মাধ্যমে বর্তমানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকার ১৩১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওষুধ প্রস্তুতকারকরা শুধু শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানের মতো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেই নয়, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও রপ্তানি করেছেন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০২২-২৩) মোট ১৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ ডলারের ওষুধ। দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারকরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে সর্বোচ্চ ২ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছেন। বাংলাদেশি ওষুধের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি করেছেন ২ কোটি ১৯ লাখ ডলারের ওষুধ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কার পর শীর্ষ ১৫ আমদানিকারকের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন, আফগানিস্তান, কেনিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, নেপাল, নাইজেরিয়া, ডেনমার্ক, সোমালিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া। যদিও প্রতি বছর বাংলাদেশের ওষুধ-পণ্য রপ্তানির পরিমাণ প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়ছে না, তবু স্থানীয় উৎপাদকরা বিশ্বজুড়ে তাদের বাজার বৈচিত্র্যময় করছেন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ১৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার হলেও আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ওষুধ কোম্পানির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, মাত্র দুই দশক আগে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি বাজার ৩০টির কম দেশে ছিল। এখন এটি ১৩০টির বেশি গন্তব্যে প্রসারিত হয়েছে। তারা আমেরিকা ও ইউরোপসহ বিভিন্ন গন্তব্যে তাদের বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের একটি ভালো বাজার রয়েছে। এখন আমরা লাতিন আমেরিকায় প্রসারিত করার চেষ্টা করছি। লাতিন আমেরিকার বাজার এখনো বাংলাদেশের ওষুধ পণ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো এখন ল্যাটিন আমেরিকার বাজারে প্রবেশের জন্য কাজ করছে। দু-একটি কোম্পানি ইতোমধ্যেই ব্রাজিল থেকে রপ্তানির সনদ পেয়েছে। তারা আশা করছে, বাংলাদেশের বাজার বহুমুখীকরণ অব্যাহত থাকবে এবং আগামী বছরগুলোয় দেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বাজার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ওষুধের বাজার সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের উচিত দেশের সামগ্রিক বৈদেশিক-বিনিময় আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে আরও নীতি ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ওষুধের বাজারকে প্রশস্ত ও বৈচিত্র্যময় করার জন্য বেসরকারি খাতকে সহায়তা করা।