এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআইজিডির যৌথ জরিপ অর্থনীতি ভুল পথে মনে করে ৭০% মানুষ ৪৮ শতাংশের মতে, রাজনীতি সঠিক পথে নেই

এশিয়া ফাউন্ডেশন ও বিআইজিডির যৌথ জরিপ অর্থনীতি ভুল পথে মনে করে ৭০% মানুষ ৪৮ শতাংশের মতে, রাজনীতি সঠিক পথে নেই

দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অর্থনীতি ভুল পথে এগোচ্ছে। রাজনীতি সঠিক পথে নেই এমন মত ৪৮ শতাংশ মানুষের। আর ৩৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, রাজনীতি সঠিক পথেই আছে। সামাজিকভাবে দেশ সঠিক দিকে এগোচ্ছে– এমন ধারণা ৫৮ শতাংশ মানুষের।
সম্প্রতি দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) যৌথ জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জরিপের ফলাফল জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রতি জেলা থেকে ১৬০ জন করে ১০ হাজার ২৪০ জন জরিপে অংশ নেন। এতে সমান সংখ্যক নারী ও পুরুষ সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৪ শতাংশ মানুষ ছিলেন গ্রামীণ অঞ্চলের। বাকি ৩৬ শতাংশ শহরের। জরিপে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার পাশাপাশি রাজনীতি, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, নির্বাচন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমসাময়িক বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের ওপর মতামত নেওয়া হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ জরিপ চালানো হয়।

এর আগে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে একই ধরনের জরিপ করেছিল এ দুটি প্রতিষ্ঠান। আগের জরিপের তুলনা করে এশিয়া ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় এবার সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক– এ তিন দিকেই মানুষের ইতিবাচক ধারণা অপেক্ষাকৃত কমেছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে দেশের পরিস্থিতির বিষয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বেড়েছে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতি নিয়ে যতটা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন, ঠিক তার বিপরীত ধারণা পোষণ করেন দরিদ্র মানুষরা। দরিদ্র মানুষের এ বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব বেড়েছে। যেমন– মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বা তার কম আয় করেন, এমন মানুষের ৮৪ শতাংশ ২০১৯ সালে জরিপে অংশ নিয়ে বলেছিলেন, দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে এগোচ্ছে। কিন্তু এখন এই শ্রেণির মানুষের মধ্যে ৩২ শতাংশ এমন ধারণা পোষণ করছেন। এদিকে মাসিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় রয়েছে এমন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ২৭ শতাংশ এখনও মনে করেন অর্থনীতি ঠিক পথেই আছে। ২০১৯ সালের এদের ৫৮ শতাংশ এ ধারণা পোষণ করতেন।

জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশের প্রধান সমস্যা। ৮৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানান, এ সমস্যা তাদের জীবন ও জীবিকার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
দেশের রাজনীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণা বেড়েছে। বিশেষত সরকারি দলের বিষয়ে মানুষের ধারণা খারাপ হয়েছে বেশি। ২০১৯ সালের জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ১১ শতাংশ মানুষের উত্তর ছিল, রাজনীতিতে ক্ষমতাশীন দলের প্রভাব নেতিবাচক। এখন এমন ধারণা পোষণকারী মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এমন একটি পরিবেশ বিদ্যমান, যেখানে একদল রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।

এদিকে নিজ দেশ থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের সহানুভূতি আগের তুলনায় কমেছে। পরিস্থিতি যদি এমন হয়, রোহিঙ্গাদের নিয়ে একই সমাজে বাস করতে হলে তা মেনে নেবেন কিনা– এমন প্রশ্নে ১৩ শতাংশ মানুষ ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। অথচ ২০১৯ সালে এ হার ছিল ১৫ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ছিল ৩৪ শতাংশ। ৪৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য যথেষ্ট করেছে ও করছে।
পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন সমসাময়িক সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে ৭২ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন। এ সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন ৪৭ শতাংশ। আর সরকারের কৃতিত্ব বলেছেন ২৮ শতাংশ।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ