নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমার অবাক লাগে যখন বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি। যাদের জন্ম হয়েছে হত্যা ক্যু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। যাদের যাত্রা শুরু হয়েছে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তাদের কিছু প্রভু আছে, তারা একই সঙ্গে সুর মিলায় বাংলাদেশে নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতেই হবে।
তাদের কাছে প্রশ্ন, জিয়ার হ্যাঁ-না ভোট, খালেদার ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচনের সময় গণতন্ত্র কোথায় ছিল? জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার নির্বাচন তো আমরা দেখেছি। আজ যারা বাংলাদেশে টর্চলাইট দিয়ে নির্বাচন খুঁজছেন, তখন তারা কোথায় ছিলেন? অন্ধ ছিলেন? তখন তো তাদের সোচ্চার দেখিনি!
বুধবার (৩০ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ সভার আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো বিচার চেয়ে পাইনি। শেখ রেহানার পাসপোর্টটা পর্যন্ত জিয়া দেয়নি। রেহানা কি এদেশের নাগরিক ছিল না? তার মানবাধিকার ছিল না?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রক্ত দিয়ে এদেশের গণতন্ত্র এনেছে। আমাদের হাতে গণতন্ত্র সুরক্ষিত না, সুরক্ষিত মিলিটারি ডিক্টেটরদের দোসরদের হাতে? যারা শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নেয়, কৃষকদের গুলি করে হত্যা করে, তারা এখন গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী? কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে, তারাও তাদের পক্ষে কথা বলে।
খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট তো অনেকেরই জন্মদিন। কেউ কি পালন করে? কত বড় অমানুষ হলে জাতি যেদিন শোক দিবস পালন করে সেদিন সে জন্মদিন পালন করে! কতটা অমানবিক হলে শোক দিবসকে জন্মদিন বানিয়ে উৎসব করতে পারে। জিয়ার হাতে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা হয়েছে। একইভাবে খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। এখনো মনে পড়লে শিহরিত হতে হয়। অনেককে ধরে কোথায় নিয়ে গেছে কেউ বলতে পারে না। যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, হত্যা খুন ও গুম করেছে। জনগণের ভাগ্য তারা পরিবর্তন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল বিএনপি। তারা জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। ভোট নিয়ে প্রহসন করেছে। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া নির্বিচারে হাজার হাজার সেনা অফিসার হত্যা করেছে। তাদের লাশও গুম করে। নিহতদের পরিবার এখনও লাশ খুঁজে বেড়ায়। কেঁদে ফেরে তাদের স্বজনদের খোঁজে। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যেভাবে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়, সেভাবেই জিয়াকেও খুন করা হয়। তার লাশেরও খবর নাই। জেনারেল এরশাদ বলে গেছেন, জিয়ার লাশ পাওয়া যায়নি। জিয়ার লাশ খালেদা, তারেক ও কোকো দেখে নাই। একটা বাক্স এনে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় সংসদ এলাকায় দাফন করা হয়। বিএনপি নেতারা সেখানে গিয়ে ফুল দেয়। কিন্তু কাকে ফুল দেয়, তারা কি জানে?
শেখ হাসিনা বলেন, খুনিদের বিচার হবে না, সেই অধ্যাদেশ জারি করা হয়। শুধু তাই নয়, খুনিদের চাকরিও দেওয়া হয়। এই খুনিরা বিভিন্ন দূতাবাসে যখন চাকরি পায়, অনেক দেশ কিন্তু নেয়নি তাদের। মনে হয়েছিল- ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডটা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান জড়িত না থাকলে মোশতাক এই হত্যাকাণ্ড করতে পারতো না। ১৫ আগস্টে শুধু একটা পরিবারকে হত্যা করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধকে হত্যা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন উত্তরের সহ-সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ রায়, উত্তরের সহ-সভাপতি সাদেক খান এমপি। এছাড়ও আওয়ামী লীগের জাতীয়, কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ শোক সভায় অংশ নেন।