বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এখনই কোনো উপসংহারে পৌঁছতে চান না।

তারা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশকিছু প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন। পর্যবেক্ষকদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি চায়; আবার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতিও চায় না।

বাইডেন প্রশাসন এই দ্বৈত লক্ষ্য অর্জনে ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞাসহ যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে; সেটা অনেকটা পরীক্ষামূলক। এই প্রক্রিয়ায় সাফল্য অর্জিত হলে অন্যসব দেশেও বাইডেন প্রশাসন এ পদ্ধতি অনুসরণ করবে।

ওয়াশিংটন ডিসির উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। এটার ব্যতিক্রম হলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন হতে পারে। সম্পর্ক সীমিত হয়ে আসতে পারে।

কিন্তু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নির্বাচন কেমন হয়েছে সেই বিচার করাটা কঠিন হবে। ফলে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশ্লেষক প্রথমবারের মতো সফরে বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন।

বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র সঙ্গে আলাপকালে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বাইডেন প্রশাসনের ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার লক্ষ্য হলো, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার যেন সবকিছু করে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশ্লেষক বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আরও কিছু ফ্যাক্টর সামনে নিয়ে এসেছেন। তার মধ্যে আছে ভূ-রাজনীতির ভারসাম্য, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং জঙ্গিবাদের ঝুঁকি।

ভূ-রাজনীতিতে ভারত-চীন সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্য রক্ষা করা। এই কাজটা অত্যন্ত কঠিন। শুধু পোশাক শিল্পের রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতি ঝুঁকিপূর্ণ। জঙ্গিবাদের ঝুঁকি তো আছেই।

মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, এই সময়ে বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগ না দেওয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে যোগ দিতে পারবে। ঢাকায় একটি সূত্র যুগান্তরকে বলেছে, ব্রিকসে ইরান যোগ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্লোবাল সাউথের এই জোটকে পশ্চিমাদের বিরোধী বলে মনে হতে পারে।

জি-২০ এর মতো ব্রিকসে এবার মোট সদস্য সংখ্যা ২০টিতে উন্নীত করার একটা চেষ্টা ছিল। মোট ৪০টি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে চাইলেও আবেদন করেছে ২২টি দেশ। কিন্তু সদস্য পদ পেয়েছে মাত্র ছয়টি দেশ। সদস্য কম হওয়ার পেছনে পশ্চিমের ইন্ধন ছিল বলে বাংলাদেশের ওই কূটনীতিক মনে করেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা নিয়ে বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন, বান কি মুনসহ বিশ্বের ১৬০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিবৃতিকে অস্থিতিশীলতার ফ্যাক্টর হিসাবে দেখছে সরকারি মহল।

বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্য ভারতে আসন্ন জি-২০ সম্মেলনকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বনেতারা যোগ দেবেন। বাংলাদেশ জি-২০ সদস্য না হলেও স্বাগতিক ভারতের বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

এই সম্মেলনের সুযোগে ভারতীয় নেতারাসহ আরও অনেকের সঙ্গে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করা স্বাভাবিক।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ