নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকট শেখ হাসিনাই সমাধান দেবেন

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চলমান রাজনৈতিক সংকট শেখ হাসিনাই সমাধান দেবেন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্ন ধরনের মত দিয়েছেন। তারা মনে করেন, দেশের মানুষ শান্তি-স্থিতিশীলতা চায়। আর এই শান্তি-স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে টেকসই সমাধান দরকার। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল খালেক মনে করেন, চলমান সংকট থেকে উত্তরণে শেখ হাসিনাই শান্তিপূর্ণ সমাধান দেবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, ৫২ বছরেও নির্বাচনি ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান বের করা যায়নি। কিন্তু স্বদিচ্ছা থাকলে এটি সম্ভব। সাবেক ভিসি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ মনে করেন, আমাদের চলমান অচলাবস্থা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিশ্চয়তা দরকার। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।

 

নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে চলমান সংকট নিয়ে  আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল খালেকের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি চলমান রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে। আর সে সমাধান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দেবেন। নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বর্তমান এই ভিসি বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ের ভিসি ছিলাম, এখনও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, অর্থাৎ শেখ হাসিনার উপদেষ্টা। শেখ হাসিনার ওপর আমার গভীর আস্থা রয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ সংকটের তিনি একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান দেবেন। আমরা পরামর্শ দিতে হলে তাকেই (শেখ হাসিনাকে) দিতে হবে, এখানে অন্য কেউ (গণমাধ্যম) না।

দেশের মানুষ শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়। চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে রাস্তায় গোলাগুলি ও বোমাবাজিসহ নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, এতে সাধারণ মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে দেশের শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিতে করণীয় কী হতে পারে— এমন প্রশ্নে প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক বলেন, এটা একটা ভালো প্রসঙ্গ তোলা হলো। শেখ হাসিনা অনেক বোমা হামলা মোকাবিলা করেছেন। শুধু বোমাই নয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, দেশের ৬৪ জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা হলো, বিচারকদের হত্যা করা হয়েছে, সেটা তিনি (শেখ হাসিনা) বন্ধ করেছেন।

তখন কী ধরনের জঙ্গি তৎপরতা দেখা গেছে। সেটাকে তো তিনি মোকাবিলা করেছেন। এত যে সমস্যা ছিল এবং যেভাবে তখন জঙ্গিদের উত্থান ঘটেছিল— সেটা মোকাবিলা তো খুব একটা সহজ ছিল না শেখ হাসিনার জন্য। এখন দেশের মানুষ যা প্রত্যাশা করছে (শান্তি ও স্থিতি), তা ঠিকই আছে। কতগুলো বোমা হামলা ও সমস্যা তিনি মোকাবিলা করেছেন, সেক্ষেত্রে তাকে একটু সময় দিতেই হবে। তিনি বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি যে, এত জনসংখ্যার দেশে প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ যাবে। যাওয়ার কথা ছিল না, আমরা ধরে নিয়েছিলাম শতকরা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ঘরে বিদ্যুৎ যাবে; কিন্তু সেখানে কি দেখা গেল? এখন শতভাগ বিদ্যুৎ দেয়া হয়েছে। যদি শেখ হাসিনা উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে হয়তো এখনো অনেক এলাকায় কুপি বাতি জ্বালাতে হতো। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার পরও এখন আর দুই ঘণ্টার তর (লোডশেডিং) সয় না। শেখ হাসিনা যে এত উন্নয়ন ও অগ্রগতি করেছেন, তা সব ধুয়ে ফেলতে চায়!

তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না’— এটা রবীন্দ্রনাথের কথা; এটা আমাদের জাতীয় চরিত্র, যা পেয়েছি সেটা আর ভালো লাগছে না, যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই! এত বড় কবি, তিনি আমাদের জাতীয় চরিত্র বুঝেই এ কবিতা লিখে গেছেন। আলাদা কিছু এ মুহূর্তে বলা যায় না, এটা আমার বিশ্বাসের কথাই বললাম, সংকট উত্তরণের জন্য শেখ হাসিনা সফল হবেন ইনশাআল্লাহ— বলেন অধ্যাপক আবদুল খালেক।

নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে চলমান দুটি রাজনৈতিক পক্ষের দুই মেরুতে অবস্থান প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার  বলেন, আমার মনে হয় তাদের (রাজনীতিকদের) এখন চিন্তা করা উচিত নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে স্থায়ী সমাধান। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এ বিষয়ে কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি, এখন স্থায়ী সমাধানের দিকে চিন্তা করা উচিত। স্থায়ী সমাধানের জন্য আলাপ-আলোচনা করে সমাধানে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন অবস্থার মূল কারণ হলো আমাদের দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি। আমাদের আরও অনেকগুলো ক্ষেত্রে অসংগতি রয়েছে, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি ও নানা অসংগতি দূর করার জন্য এর একটি টেকসই সমাধান দরকার। নির্বাচনের বেশি সময় নেই, নির্বাচনকালীন সরকার বা নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে এ সময়ের মধ্যেই টেকসই সমাধান বের করা কী সম্ভব— এমন প্রশ্নে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অবশ্যই সম্ভব। এজন্য চাই সদিচ্ছা; সদিচ্ছা থাকলে কম সময়ের মধ্যেই এর একটি টেকসই সমাধান হওয়া সম্ভব।

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যাললয়ে সাবেক ভিসি ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন— দেখুন, বর্তমানে রাজনীতির যে গতিপথ, দুটি বিবদমান পক্ষ তারা চোখাচোখি। বলা যায় এক ধরনের অবলাবস্থাই তৈরি হয়েছে।

আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একটাই পথ আছে আর সেটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিশ্চয়তা। সেটি যতক্ষণ পর্যন্ত নেগোশিয়েট না হচ্ছে, ততক্ষণ এই অচলাবস্থা ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সচেতনতা কিন্তু কোনো দলেরই নেই; আবার যারা রাজনীতি করেন, এ দুই পক্ষকে নিয়েই আমাদের টোটাল জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে রাখতে হলে সরকার ও বিরোধী পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার সুযোগ নেই নানাবিদ কারণে। এর একটি হচ্ছে সরকার বা শাসক দলের পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে; কিন্তু বেঁচে থাকতে এটি তারা চাইবে না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, এখানে গৃহযুদ্ধ হতে হবে। গৃহযুদ্ধ না হলে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে না। হস্তক্ষেপ করতে হলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ঐকমত্য লাগবে। আমেরিকা, ব্রিটেন বা ফ্রান্স আগ্রহী হলেও চীন ও রাশিয়া করবে না, তারা ভ্যাটো দিয়ে বসবে। তখন সেখানেও সমাধান পাওয়া যাবে না। এরকম এক পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। এখন আন্তর্জাতিক নিশ্চয়তা লাগবে। যেখানে নিশ্চয়তা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে।

তিনি বলেন, নাবালক যদি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে অভিভাবকরা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন; এক্ষেত্রেও সেটি হতে পারে।

জাতীয় রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ