শান্তিপূর্ণভাবে সরকার হটাতে চায় বিএনপি

শান্তিপূর্ণভাবে সরকার হটাতে চায় বিএনপি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর সাড়ে তিন মাস বাকি। একদিকে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার পক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আরেকদিকে সরকারের পদত্যাগসহ এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির দিকে নজর দিচ্ছে বিএনপি। দলের নেতারা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পতন ঘটাবেন। তবে আওয়ামী লীগ একদিকে মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। অন্যদিকে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ সংঘাতে জড়াচ্ছে বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ।

বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি, এ ঘোষণা আগেই দিয়েছে দলটি। এই নির্বাচন যাতে নির্দলীয় তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে হয়, সেই দাবিতে এখনো অনড় তারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও শরিক দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার কথাও বলছেন দলের নেতারা।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় গণমিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। এ কারণে দলের পক্ষ থেকে নিজস্ব কর্মসূচি নেই। অন্যদিকে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। বিএনপির ডাকা ওই অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর তিনটি বড় প্রবেশমুখে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছন্দপতন হয়েছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আন্দোলনে উত্থান-পতন থাকবেই, আন্দোলন কখনো ওঠে, কখনো নামে। বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়ে সহিংস আচরণ করছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা আহত হচ্ছেন, গ্রেপ্তার হচ্ছেন। গত ২৯ জুলাই বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো মনে হতে পারে দলের কর্মসূচি ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে তা হয়নি। আন্দোলন চলমান আছে।’

সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিএনপি কখনোই সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করে না। আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা চাই, রাজনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় জানাতে এবং রাষ্ট্র সংস্কার করতে।’

গত ১ সেপ্টেম্বর ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রা করে বিএনপি। এর মধ্যে গত ১ ও ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বড় জমায়েত করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কর্মসূচি থেকে বিএনপি কী বার্তা পেল- এমন প্রশ্নের উত্তরে সেলিমা রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিঘ্নতা ঘটাতে চায়। এ কারণে বিএনপির কর্মসূচির দিনই তারা কর্মসূচি দেয় এবং প্রশাসন ও নেতা-কর্মীদের নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশের নামে সন্ত্রাস করছে। তারা জোর করে আবারও অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়।’

এই অল্প সময়ে সরকারের পদত্যাগ সম্ভব হবে কি না- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা আশাবাদী। জনগণের মাধ্যমেই এ সরকারের পতন ঘটাব। কোনো কিছুতেই এই আন্দোলন আর দমে যাবে না। আমরা চেষ্টা করছি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পদত্যাগ করানো। পরবর্তী সময়ে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন ও ক্ষমতার পালাবদল করা।’

বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে ছোট-বড় মিলে ৩৬টি রাজনৈতিক দল সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎভাবে আন্দোলন করছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি দল পৃথকভাবে আন্দোলন করছে।

সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচি কবে নেবে বিএনপি- এমন প্রশ্নের উত্তরে সেলিমা রহমান বলেন, ‘কঠোর কর্মসূচি বিএনপি দেবে কি দেবে না, সামনে পরিস্থিতিই বলে দেবে এই আন্দোলন কোন দিকে যাবে। আন্দোলনের ধারা কোন দিকে যাবে, তা পরিস্থিতিই বলে দেবে। বিএনপি জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। এ দেশে জনগণ যাতে তাদের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য অধিকার ফিরে পায়, সে লক্ষ্যে বিএনপি রাজপথে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করছে।’

৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে গণমিছিল

সরকারের পদত্যাগের এক দফাসহ দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আগামী শনিবার এই গণমিছিল করা হবে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎভাবে আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল-জোটগুলোও এই কর্মসূচি পালন করবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের এক দফার আন্দোলন চলমান। বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ, বিদ্যমান অবৈধ সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনে এই আন্দোলন।’

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ