অক্টোবরের প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরেই সেরে নিতে চায় বিএনপি বৃহত্তর ১৯ জেলায় রোডমার্চ কর্মসূচি আসতে পারে

অক্টোবরের প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরেই সেরে নিতে চায় বিএনপি বৃহত্তর ১৯ জেলায় রোডমার্চ কর্মসূচি আসতে পারে

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে চলতি মাসে ঢাকাসহ দেশের বৃহত্তর ১৯ জেলায় সমাবেশ অথবা রোডমার্চের কথা ভাবছে বিএনপি।
গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা এই কর্মসূচির ব্যাপারে মতামত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আন্দোলনের প্রস্তাবিত এই কর্মসূচি দলের হাইকমান্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সারতে চায় বিএনপি।

 

গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি পরিকল্পনামাফিক না হওয়ায় আগামীর কর্মসূচিতে আর কোনো ভুল করতে চায় দলটি। কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো সমন্বয়হীনতা থাকলে এই সমাবেশ অথবা রোডমার্চের মধ্য দিয়ে তাও কাটিয়ে উঠতে চান নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চও এক দফা আন্দোলনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে। চলতি মাসে তারা ঢাকায় যুগপৎভাবে ছাত্র সমাবেশ, শ্রমিক সমাবেশসহ একাধিক কর্মসূচির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছেন। বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সাথে পরবর্তী বৈঠকে আন্দোলনের সম্ভাব্য একাধিক প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন তারা। এ ছাড়া সেখানে বিএনপির আন্দোলন প্রস্তাবনা নিয়েও আলোচনা হবে। আগামী শনিবার এই বৈঠক হতে পারে।

এ দিকে আগামীকাল শুক্রবার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির। এই প্রতিবাদ সমাবেশটি যুগপৎভাবে পালনের চিন্তাভাবনা চলছে বলে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ সূত্রে জানা গেছে।

এক দফার আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এক দফা দাবি আদায়ে আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আমাদের এই আন্দোলনে ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে। তারা আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। সরকারের উচিত, গণদাবি মেনে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। শিগগিরই এক দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, এক দফা দাবি আদায়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নানা কর্মসূচি পালন করছি। আগামীতে আরো কর্মসূচি আসবে। ঢাকায় শুক্রবার অনুষ্ঠেয় বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচি যুগপৎভাবে পালনের চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান তিনি।
মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আমরা একাধিক প্রস্তাবনা তৈরি করছি। বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সাথে পরবর্তী বৈঠকে এসব প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

এ দিকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক জোটের ঘোষিত সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে আগামী শনি ও রোববার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে রোডমার্চ করবে বিএনপির তিন অঙ্গসহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে দশমাইল হয়ে দিনাজপুর এবং ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে সান্তাহার-নওগাঁ হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত এই রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আমরা আপাতত দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করলাম। আগামীতে পর্যায়ক্রমে আরো কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করব।

১০ দফার ভিত্তিতে গত ৩০ ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। এরপর ১২ জুলাই থেকে এক দফার আন্দোলন নামে দলটি। এই আন্দোলনে ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশত দল সম্পৃক্ত হয়েছে। এক দফার আন্দোলন ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান, গণমিছিল ও কালো পতাকা গণমিছিলের কর্মসূচি করে। সর্বশেষ তারা গত শনিবার ঢাকায় গণমিছিল করেছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্তভাবে দাবি আদায়ে অক্টোবর মাসকে টার্গেট করছে দলটি। ওই মাসে রাজপথের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আন্দোলনেই দাবি আদায় করতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিলের আগেই চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায় বিএনপি।

জানা গেছে, এক দফা দাবি আদায়ে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই লাগাতার অলআউট আন্দোলনে নামতে চান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তখন সব কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক এবং তা যুগপৎভাবে পালিত হবে। আর সে সময় কর্মসূচি শুধু শুক্র-শনিবারে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে। সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। আর মধ্য অক্টোবর থেকে ঘেরাওয়ের কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি। নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাওয়ের সাথে তখন টানা অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে পারে বিএনপি।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ