উচ্চ তাপমাত্রা ও বন্যার নেতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। শুধু এ দুই কারণেই ২০৩০ সাল নাগাদ ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের ক্ষতির মুখে পড়বে এশিয়ার চার দেশের পোশাক রফতানি খাত। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান শ্রোডার্স ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। খবর রয়টার্স।
গবেষণা প্রতিবেদনটি গতকাল প্রকাশিত হয়। গবেষণায় পোশাক শিল্পের ছয়টি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করা হয়েছে, যারা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করে। দেখা গেছে, ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাই আগামী দিনগুলোয় উচ্চ তাপমাত্রা ও বন্যার কারণে ব্যাহত হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে তার বার্ষিক আয়ের ৫ শতাংশও হারাতে হতে পারে।
নতুন এ প্রতিবেদনকে পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে। সম্প্রতি এ শিল্প ব্যয়সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির কাছ থেকে যে তথ্য পান তা অপ্রতুল। কর্নেল গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক জ্যাসন জুড এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেসব সরবরাহকারী ও ক্রেতার সঙ্গে আমরা কথাবার্তা বলেছি, তাদের কারো মনোযোগই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বন্যার দিকে নেই। জলবায়ুসংক্রান্ত ইস্যুতে পোশাক শিল্পের এখনো আলোচ্য বিষয় হলো ব্যয় কমানো, কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনা এবং পুনরায় প্রক্রিয়াজাতের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বন্যা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে তারা এখনো চিন্তা করছে না।’
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এ সময়ে জলবায়ুসংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি অনুধাবন জরুরি। কিন্তু এ ব্যাপারে পদক্ষেপ ও প্রক্রিয়া এখনো শুরুর দিকে। অল্প কিছু বিনিয়োগকারী পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। শ্রোডার্সের টেকসই বিনিয়োগ গবেষণাবিষয়ক প্রধান আঙ্গাস বাউয়ার বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য খুবই অপ্রতুল। কিছু ব্র্যান্ড তাদের সরবরাহকারী কারখানার অবস্থান সম্পর্কেও তথ্য দিতে নারাজ।’
বাউয়ারের দাবি অনুযায়ী, শ্রোডার্স ৮৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে। আগামী দিনগুলোয় তারা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াবে, বিশেষ করে তথ্য জানার ব্যাপারে। এতে সরবরাহকারী ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কাজ করা আরো সহজ হয়ে উঠবে। নতুন পরিস্থিতিতে নয়া কৌশল গ্রহণ এবং তার ফলে কর্মীদের ওপর প্রভাব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা সম্ভব হবে।
গবেষকরা ভবিষ্যতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বন্যার সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়েছেন। একই সঙ্গে সরবরাহ চেইনে কেমন ক্ষত তৈরি হতে পারে, সেটির ধারণা দিয়েছেন। তাপমাত্রার কারণে কর্মীরা হিট স্ট্রেসে ভোগেন। ফলে উৎপাদন কমে যায়। এভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ব্যাহত হয় উৎপাদন।
বন্যার কারণেও কারখানার কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের পোশাক রফতানি বৈশ্বিক পোশাক রফতানির ১৮ শতাংশ। এ দেশগুলোয় পোশাক ও জুতা শিল্পে কাজ করছে ১ কোটি ৬ লাখ মানুষ।
উচ্চ তাপমাত্রা ও বন্যার প্রভাবে উৎপাদন কমে গেলে স্বভাবতই রফতানি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক খাতে এশিয়ার চার দেশের আয় কমবে ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, যা প্রত্যাশিত আয়ের ২২ শতাংশ। পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত হবে ৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। ২০৫০ সালের মধ্যে রফতানি আয় কমবে ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ। কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা হারাবে ৮৬ লাখ ৪ হাজার।