টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আ.লীগ-বিএনপি

টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আ.লীগ-বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হচ্ছে দেশের রাজনীতি। নির্বাচন ইস্যুতে সংবিধানের বাইরে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগসহ নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে অনড় বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে টানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে দুদল। ক্ষমতাসীন দল ঢাকা ও এর বাইরে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সমাবেশ করবে।
দাবি আদায়ে বিএনপিও ৩ অক্টোবর পর্যন্ত রোডমার্চ ও সমাবেশ করবে। যা টঙ্গী ও কেরানীগঞ্জের সমাবেশের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীকে টার্গেট করে এবারের কর্মসূচি দিয়েছে দেশের বড় এ দুদল। তাদের ‘পালটাপালটি’ কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।

 

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, ৩ অক্টোবর পর্যন্ত টানা কর্মসূচি রয়েছে। সরকারকে দেশের জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাদের পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা হতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। তাই আন্দোলন কখন কোনদিকে মোড় নেবে সেটা একমাত্র রাস্তাই বলে দেবে। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সরকারই টিকে থাকতে পারে না। এ সরকারও টিকে থাকতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনবলেন, আমরা আমাদের কর্মসূচি আগে থেকেই শুরু করেছি। এখনো কর্মসূচিগুলো চলছে। আমরা বলেছি-নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব। শান্তি সমাবেশ করব, শান্তির কথা বলব। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি পালটাপালটি কর্মসূচি নয়। বিএনপি তাদের কর্মসূচি করবে। আমরা আমাদের কর্মসূচি পালন করব। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমস্যা চাই না। কিন্তু আমরা মাঠ ছাড়ব না। আমাদের কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব।

এদিকে বিএনপির আন্দোলন ঘিরে কৌশলী আওয়ামী লীগ। তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে সরাসরি বাধা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে দলের হাইকমান্ডের। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধীদের একেবারে ফাঁকা মাঠেও ছাড়তে চায় না ক্ষমতাসীনরা। ফলে আগের মতোই রাজপথে সরব থাকবে দলটি। এছাড়া নিজেদের নির্বাচনি প্রস্তুতিতে আরও গতি বাড়াবে। ইতোমধ্যে টানা কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে’ ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ দিনে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সাতটি সমাবেশ করবে।

এছাড়া ঈদে মিলাদুন্নবী দোয়া মাহফিল এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থেকে এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

বিএনপিও আগের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চায়। প্রথম ধাপে রাজধানীসহ প্রবেশপথে ৮ সমাবেশ ও ছয় সাংগঠনিক বিভাগে ৫টি রোডমার্চ করবে। এছাড়া ঢাকায় পৃথকভাবে পেশাজীবী, মহিলা, শ্রমিক ও কৃষক-চারটি সমাবেশ হবে। কর্মসূচি সফলে সিনিয়র নেতাদের দিয়ে পৃথক টিম করেছে দলটি। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরসহ সাংগঠনিক জেলা থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপের কর্মসূচি থেকে সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করা হবে। সরকার কঠোর হলে দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচিও কঠোর হবে। প্রথম ধাপ শেষে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে দলটি। এ ধাপে হরতাল-অবরোধের মতো ভিন্ন নামে কর্মসূচির প্রস্তাব করেছেন নীতিনির্ধারকরা। নেতারা আরও বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচার শুরু হয়ে যাবে। তাই সেই সময়ে আমাদের আন্দোলনের গতি অর্জন করা কঠিন হবে। তাই তার আগেই একদফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। সে ধরনের প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছে

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ