বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘাড়ে মামলার বোঝা। শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মামলার জালে। দলটির দাবি অনুযায়ী, সারা দেশে দেড় লাখ মামলায় আসামি প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মী। এরই মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ শতাধিক নেতাকর্মী দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের করা আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। বেশিরভাগ আসামিই রয়েছেন জামিনে। কিছু আছেন কারাগারে। কেউ পলাতক। দণ্ডপ্রাপ্তরা সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। একই কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেননি দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেকেই।
খালেদা জিয়া ছাড়াও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে যারা দণ্ডিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন—ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, কুমিল্লার সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, সাবেক ড্যাব নেতা ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাতক্ষীরার সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, জামালপুরের সাবেক এমপি রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, মাগুরার সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ভোলার সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম, খাগড়াছড়ির সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া, চট্টগ্রামের সাবেক এমপি গিয়াস কাদের চৌধুরীসহ আরও অনেকেই।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কেউ নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে তিনি কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সর্বশেষ ২০১৮ দণ্ডপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগের দাবিতে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন। তাদের আবেদন শুনে একই বছরের ২৭ নভেম্বর আপিল বিভাগ বলেছিলেন, আপিল বিচারাধীন থাকলেও বিচারিক আদালতে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্তরা যতক্ষণ পর্যন্ত উচ্চ আদালত থেকে খালাস না পাবেন এবং উচ্চ আদালত সাজা স্থগিত না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দণ্ডিত কারও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
‘দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা’:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। এগুলো হচ্ছে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। এ দুটি মামলায় তার সাজা সরকারের নির্বাহী আদেশে আপাতত স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বর্তমানে নাইকো দুর্নীতি মামলাসহ তার আরও বেশ কয়েকটি মামলার বিচার দ্রুত এগোচ্ছে।
‘তারেক-জুবাইদার দণ্ড’:
২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় চিকিৎসার কথা বলে লন্ডনে চলে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছরেও তিনি আর দেশে ফেরেননি। এই সময়ে পলাতক অবস্থায় তিনি মোট পাঁচটি মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। যেখানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এ ছাড়া অর্থ পাচারের অভিযোগে করা মামলায় বিচারিক আদালত তাকে খালাস দিলেও হাইকোর্ট তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন তারেক রহমান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নড়াইলে দায়ের করা একটি মানহানি মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২। সর্বশেষ গত ২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ মামলায় তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত।
‘দণ্ডিত মীর নাছির ও মীর হেলাল’:
অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালে করা মামলায় ২০০৮ সালে সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর হেলাল উদ্দিনকে সাজা দেন বিচারিক আদালত। এরপর ২০১৯ সালে মীর নাছিরের ১৩ বছর ও তার ছেলে মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের তিন বছরের সাজা বহাল রাখেন হাইকোর্ট। ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি তাদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর মীর হেলাল এবং ৮ নভেম্বর মীর নাছির আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। বর্তমানে তারা জামিনে। আর তাদের আপিল সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
‘আমান দম্পতি’:
গত ৩০ মে আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছর এবং তার স্ত্রী সাবেরা আমানের তিন বছরের সাজা বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের অনুলিপি প্রকাশের পর এই দম্পতি আত্মসমর্পণ করলে বিচারিক আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন। বর্তমানে আমান কারাগারে থাকলেও তার স্ত্রী জামিনে কারামুক্তি পেয়েছেন। সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমান দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক।
‘বাবর ও পিন্টুসহ ৬ নেতা’:
অন্তত ছয়জন বিএনপি নেতা দণ্ডিত হয়েছেন একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলার রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। ওই রায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা প্রয়াত হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম আরিফ।
‘টুকুর সাজা বহাল’:
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে গত ৩০ মে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি আত্মসমর্পণ না করায় গত ১১ সেপ্টেম্বর বিচারিক আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ৪ কোটি ৯৬ লাখ ১১ হাজার ৯১৬ টাকার সম্পত্তির হিসাব ও আয়ের উৎস গোপন করার অভিযোগে ২০০৭ সালের মার্চে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে এ মামলা করে দুদক।
‘কাজী কামাল’:
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজন সাজা পেয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত বাকি চার আসামি হলেন সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল (কাজী কামাল), ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমান। এর মধ্যে পলাতক আছেন তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। হাইকোর্ট এ মামলায় তাদের সাজা বহাল রেখেছেন। এ মামলায় আপিল সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
‘গিয়াস কাদের চৌধুরী’:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি ও তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন চট্টগ্রামের এক আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর এই সাজার রায় ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। ওই বছরের ৩০ মে ফটিকছড়ি থানায় প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির এ মামলা করেন ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মহুরী। বর্তমানে এ মামলার আপিল বিচারাধীন।
‘হাফিজ ইব্রাহিম’:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলাটি করা হয়। এ মামলায় ২০০৮ সালের হাফিজ ইব্রাহিমকে দুদক আইনের দুটি ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পরে হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৮ সালে তার আপিলের পুনঃশুনানি করে আপিল আংশিক মঞ্জুর করেন। তিন বছরের সাজা বহাল রাখেন। তখন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছিলেন, হাফিজ ইব্রাহিমের আবেদন আংশিক মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। তথ্য গোপনের অভিযোগে তার তিন বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু তিনি দুই বছরের বেশি সাজা খেটে ফেলায় তাকে আর বাকি সাজা খাটতে হবে না। তবে তাকে ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। অনাদায়ে এক বছরের কারাদণ্ডেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আপিল বিভাগে এ মামলার আপিল বিচারাধীন।
‘রশিদুজ্জামান মিল্লাত’:
সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) আসনের প্রার্থী এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতের প্রার্থিতা বাতিল করেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এই আদেশ দেওয়া হয়। তখন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছিলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুর্নীতির মামলায় রশিদুজ্জামান মিল্লাতের সাত বছরের সাজা হয়। পরে এর বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি মামলা থেকে খালাস পান। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ মামলাটি পুনঃশুনানির জন্য হাইকোর্টে পাঠান। বর্তমানে ওই আপিল পুনঃশুনানির অপেক্ষায় আছে।
‘ওয়াদুদ ভূঁইয়া’:
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, তথ্য গোপন ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ২৯ হাজার ৩৫৪ টাকার সম্পদ অর্জন করার দায়ে ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মোট ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন। পরে তিনি এই মামলায় আপিল করে ২০০৯ সালের ২৮ এপ্রিল জামিন পান।
‘ড্যাব নেতা জাহিদ’:
জাতীয়তাবাদী ডাক্তারদের সংগঠন ‘ড্যাব’ নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৮ সালে ১৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা প্রদান করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করেও দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় বিফল হন তিনি। এখনো তার আপিল সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
‘সাবেক এমপি হাবিবসহ ৫০ জনের সাজা’:
২০ বছর আগে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ৫০ আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব এবং বিএনপি কর্মী আরিফুর রহমান ও রিপনকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া কলারোয়া উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের বাচ্চুকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া কলারোয়ার সাবেক মেয়র গাজী আক্তারুল ইসলাম, কেড়াগাছির সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন, কয়লার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রকিব মোল্লা, যুগীখালীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, বিএনপি নেতা তামিম আজাদ মেরিনসহ বাকি ৪৬ জনকে ২ থেকে ৭ বছর করে সাজা দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার একটি আদালত এ রায় দেন। বর্তমানে হাবিবসহ অনেকেরই আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
‘৮ মাসে ঢাকায় অর্ধশত নেতাকর্মীর সাজা’:
ঢাকার বিভিন্ন আদালতে গত আট মাসে সাতটি মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী সাজা পেয়েছেন। তারা মূলত ঢাকা মহাগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী। এর মধ্যে আট বছর আগে গুলশান এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার মামলায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর যুবদলের (উত্তর) আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিনসহ (জুয়েল) তিনজন বিএনপি নেতাকে কারাদণ্ড দেন আদালত। ১০ বছর আগে সবুজবাগে ককটেল বিস্ফোরণসহ নাশকতার মামলায় গত ১৯ জুন বিএনপি নেতা, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুর রহমানসহ সাতজনের দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মুগদা এলাকায় ১০ বছর আগে বাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় গত ৩ এপ্রিল বিএনপির আরও সাত নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দেন আদালত। গত ৭ আগস্ট যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ ২১ জনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। ২০১৩ সালে কোতোয়ালি থানা এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলাটি ছিল।
গত ১৭ আগস্ট সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমান, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাসাস সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহসহ পাঁচজনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সিএমএম আদালত। গত ১৮ আগস্ট রমনা থানার একটি মামলায় আবুল কালাম আজাদ নামে একজন বিএনপি কর্মীকে সাজা দিয়েছেন আদালত। সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট নাশকতার অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় করা ৬ নেতাকর্মীকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন দিদার হোসেন সজিব, ইসহাক, ইউসুফ আলী, মোজাহিদুল ইসলাম, আওরঙ্গজেব ও সুলতান মাহমুদ। ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলের হরতালে নাশকতার ঘটনায় এ মামলাটি হয়।
‘পুরোনো মামলা সচল’:
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পাশাপাশি বিএনপির বেশ কিছু বড় বড় নেতার পুরোনো মামলার বিচার নতুন করে সচল হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, রাজধানীর শ্যামপুর কদমতলীর সাবেক বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির সাবেক চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক প্রমুখ। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের জুয়েল, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতিসহ অনেকেরই মামলার বিচারে গতি এসেছে। নির্বাচনের আগেই আরও অনেকে সাজাপ্রাপ্ত হতে পারেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। আজকের পত্রিকা