নিজস্ব প্রতিবেদকঢাকা
সরকারপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় ভিসা নীতি কার্যকর করার ঘোষণাকে ‘চপেটাঘাত’ বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ ভেবেছিলেন বাইডেনের সঙ্গে ছবি তুলে সব সুরাহা করা যাবে। কিন্তু করা গেছে? কী ভয়াবহ, ওখানেই ‘চপেটাঘাত’।
গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
গতকাল বেলা তিনটায় সমাবেশ শুরুর দেড় ঘণ্টা আগেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসতে থাকেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। হাজারো নেতা–কর্মীর উপস্থিতির কারণে একপর্যায়ে নয়াপল্টন সড়কের এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশ শুরুর পর সড়কের উল্টো পাশেও নেতা–কর্মীরা অবস্থান নেন। এতে বিপরীত পাশের সড়কেও যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ভিসা নীতি প্রসঙ্গে সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে যারা দাঁড়াবে, যারা দাঁড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ভিসা নীতি স্বাধীন সার্বভৌম জাতির জন্য সম্মানজনক নয়। এই অসম্মান বয়ে আনার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন তিনি। এর পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে, নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে, মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে চায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে বিএনপির স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকে সরকার স্তব্ধ করে দিতে চায় বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি আরও বলেন, কিছুসংখ্যক অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা আবার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে তিনি পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার কথা বলতে গিয়ে কাঁদলেন ফখরুল
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বলতে গিয়ে সমাবেশে কেঁদেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন তিনি। গত শনিবার হাসপাতালে তাঁকে দেখে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে যেমনটি দেখেছেন, এমন অবস্থা আগে দেখেননি। প্রথমবারের মতো তাঁর মনে হয়েছে, তিনি অনেক বেশি অসুস্থ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেছেন, আপনাদের (বিএনপির নেতারা) কিছু করার থাকলে করেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। অবিলম্বে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারলে বাঁচানো দুষ্কর হবে।’
খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে সরকারের প্রতি দাবি জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘তা না করলে নেত্রীর ক্ষতি হবে না, বিএনপির ক্ষতি হবে না। দেশের ক্ষতি হবে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এখন থেকে আন্দোলন ডু ওর ডাই (মরো, না হয় বাঁচো), এর মাঝামাঝিতে কোনো ঠাঁই নাই।’ দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মরতে হলে মরতে হবে, গুলি খেতে হয় খেতে হবে, এরপরও এ সরকারকে সরাতেই হবে।’
সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনতে সাবেক আমলারা গোপনে সভা করেছেন, এমন দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সেখানে তাঁরা বলেছেন রক্তপাতের বিনিময়ে হলেও আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে হবে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও গোপনে সভা করছেন, এই দাবি করেন মির্জা আব্বাস।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান প্রমুখ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। আর সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল।