নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আজ অনুষ্ঠিত হবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের শপথগ্রহণ। আগামী রবিবার গঠিত হতে যাচ্ছে নতুন সরকার; শপথ নেবেন নতুন সরকারে স্থান পাওয়া মন্ত্রীরা। আসন্ন মন্ত্রিসভায় পুরনো মন্ত্রীদের মধ্যে কে থাকছেন, কে থাকছেন না, নতুন কে কে মন্ত্রিত্ব পেতে যাচ্ছেন এসব নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম গুঞ্জন চলছে। রাজনীতি-সচেতন সাধারণ মানুষও কৌতূহলী, কে কে পেতে যাচ্ছেন পতাকাশোভিত গাড়ি, তা জানতে।
সরকারি দলের একাধিক নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, টানা তৃতীয়বার সরকার গঠনের মতো ‘বিশেষ’ অর্জনের বিষয়টি মাথায় রেখে সাজানো হবে এবারের মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রীসহ বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য ৫৩ জন। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ও জোটের বিপুলসংখ্যক নেতা বিজয়ী হয়েছেন। তাই এবার কিছুটা বাড়তে পারে মন্ত্রিসভার কলেবর। বিভিন্ন কারণে সমালোচিত হওয়ায় পুরনো বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বাদ পড়তে যাচ্ছেন। তাদের পরিবর্তে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন মুখ দেখা যাবে এবার। আর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ একাধিক মন্ত্রী তাদের আগের দপ্তরেই বহাল থাকবেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবারও মন্ত্রিসভায় মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের দুই নেতাকে দেখা যাবে। জাতীয় পার্টির একাধিক নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে। আসন্ন মন্ত্রিসভায় কে হবেন অর্থমন্ত্রী, এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হননি এবং তিনি অর্থমন্ত্রী থাকছেন না, এটা নির্বাচনের আগে মোটামুটি নিশ্চিতই ছিল। তবে গতকাল মঙ্গলবার তিনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি আরও এক বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে চান। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী হিসেবে আরও দুজনের নাম আলোচনায় আছে।
দশম সংসদে সরকারের সফল মন্ত্রী হিসেবে আলোচিত শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী একই মন্ত্রণালয়ে থাকতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টদের আলোচনায় বলা হচ্ছে। বয়োবৃদ্ধ ও প্রবীণ দু-তিনজন বাদ পড়তে পারেন। পদোন্নতি হতে পারে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু একই দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে জোর ধারণা করা হচ্ছে।
গণভবন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরের মূল্যায়নে যাদের পারফরম্যান্স খারাপ, তারা সবাই বাদ পড়বেন। নবম সংসদের মন্ত্রিসভার যেসব মন্ত্রী দশম সংসদের মন্ত্রিসভায় বাদ পড়েছিলেন তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনাও কম।
নতুনদের মধ্যে যাদের নাম আলোচনায় আছে, তারা হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমান এফ রহমান, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের এমপি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, গাইবান্ধা-২ আসন থেকে নির্বাচিত মাহবুব আরা বেগম গিনি, বগুড়া-৫ আসনের হাবিবর রহমান, নওগাঁ-১ আসনের সাধনচন্দ্র মজুমদার, নাটোর-৪ আসনের মো. আব্দুল কুদ্দুস, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের হাবিবে মিল্লাত, যশোর-৫ আসনের স্বপন ভট্টাচার্য, খুলনা-৪ আসনের আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাতক্ষীরা-৪ আসনের এসএম জগলুল হায়দার, টাঙ্গাইল-৭ আসনের মো. একাব্বর হোসেন, নেত্রকোণা-৩ আসনের অসীম কুমার উকিল, নরসিংদী-৪ আসনের নুরুল মজিদ হুমায়ুন এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান প্রমুখ।
তবে সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে কারা হচ্ছেন চূড়ান্তভাবে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য তা পুরোপুরি নির্ভর করবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। সংবিধানের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মন্ত্রিসভা গঠনের একমাত্র এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভার কলেবর বাড়িয়ে এর সদস্য করা হয় ৫৩।
সাংসদদের শপথগ্রহণ
আজ বৃহস্পতিবার শপথ নেবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরা। জাতীয় সংসদ ভবনের পূর্ব ব্লকের প্রথম লেভেলের শপথকক্ষে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় এ শপথগ্রহণ। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ২৯৮ আসনে বিজয়ী সংসদ সদস্যের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি স্বাক্ষরিত ওই গেজেট হাতে পাওয়ার পর সংসদ সচিবালয় শপথগ্রহণের এ সূচি চূড়ান্ত করে। প্রসঙ্গত, গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথগ্রহণের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, সংসদের বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী একাদশ সংসদে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় তিনি নিজে আগে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণ কবেন। সংবিধান অনুযায়ী, স্পিকার নিজেই নিজের শপথ পড়াবেন। এর পর তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য এবং এর পর জাতীয় পার্টি ও অন্য সংসদ সদস্যদের শপথবাক্য পড়াবেন। শপথ শেষে নতুন সংসদ সদস্যরা সংসদ সচিবের কার্যালয়ের স্বাক্ষর খাতায় সই করবেন এবং একসঙ্গে তাদের ছবি তোলা হবে। শপথ শেষে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা বৈঠক করে নিজ দলের সংসদ নেতা নির্বাচন করবেন।
এদিকে নতুন সাংসদদের বরণ করে নিতে সংসদ ভবনও সেজেছে নয়া সাজে। ধোয়ামোছা, সাফসুতরোসহ অন্যান্য প্রস্তুতি ইতিপূর্বেই সম্পন্ন হয়েছে। নতুন সাংসদদের পরিচয়পত্র প্রদান ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে বুথ।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ২৫৯টি আসন পাওয়ায় টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। দল হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০টি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। তাই সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন দলটি একাদশ সংসদেও বিরোধী দল হতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছে ৭টি আসন। বিএনপি এককভাবে পেয়েছে ৫টি। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নাও নিতে পারেন।
প্রথম অধিবেশনের ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে পদ শূন্য
সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত কোনো সদস্য শপথ না নিলে সেই আসন শূন্য হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। গতকাল বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা শপথ না নিলে আইনি প্রক্রিয়া কী হবে এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে নতুন সংসদের অধিবেশন বসবে। এর ৯০ দিনের মধ্যে যদি কেউ শপথ না নেন বা কোনো প্রকার রেসপন্স না করেন, তখন সংসদ সচিবালয় থেকে পদটি শূন্য ঘোষণা করা হবে।
ইসি সচিব জানান, গেজেট প্রকাশ করা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কাজ। অবশিষ্ট সব সংসদ সচিবালয়ের কাজ। গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আমাদের আর কোনো কার্যক্রম থাকে না।