নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা হয়নি এবং এ ব্যাপারে কেউ জিজ্ঞাসাও করেনি। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল বিকালে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনে যান। তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের দূতাবাস পরিদর্শন করেন। সেদিন সেখানেই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কোনো কথা বলেছেন কি না জানতে চান একজন সাংবাদিক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরকম কোনো কথা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক অভিজ্ঞতা ২০০৭-০৮-এ হয়ে গেছে না আমাদের! তারপর আবার কেউ চায়? চাইতে পারে? এ ব্যবস্থাটা তো বিএনপিই নষ্ট করছে। তিনি বলেন, আমি কোনো কিছু পেতে বা নিতে ক্ষমতায় আসিনি। এ দেশের জন্য আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সবাই জীবন দিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান এবং দীর্ঘ সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫-৯৬, ২০০১-০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কী দিয়েছে? মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করতে পারেনি। সব সময় উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষ লেগে থাকত, দক্ষিণেও। মানুষ তখন এক বেলা খাবার জোটাতে পারত না। ছেঁড়া কাপড় পরে থাকত, বিদেশ থেকে পুরাতন কাপড় এনে পরানো হতো। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টিহীনতা প্রতিনিয়তই ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ যতটুকু পাচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগ এবং আমরা ক্ষমতায় আসার পর উন্নতিটা হচ্ছে। এখন এত প্রশ্ন আসে কেন? এখন একটা দেশ এত দ্রুত উন্নতি করেছে, সেটাই মানুষের মাথাব্যথা হয়ে গেল কি না? সেটাকে এখন কীভাবে নষ্ট করা যায়, এই সন্দেহটা আমারও আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নির্বাচন বয়কট করেছে, কলুষিত করেছে, ভোট চুরি করেছে, ভোট ডাকাতি করেছে তাদের কাছ থেকে শুনতে হয় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা! এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। ২০০৮ সালে যখন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলো, যে নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। তাদের আবার বিএনপি-জামায়াত ২০-দলীয় ঐক্য জোট, পরে আরেকটা সিট বেড়ে হয়েছিল ৩০টা। ২০১৪ নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ হত্যা এবং এমন কোনো অপকর্ম নাই, করেনি। পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে নির্বাচন থেকে সরে গেল। সরে গিয়ে নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করল। এখন তাদের মুখে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনি এবং তা সব জায়গায় প্রচার করে বেড়াচ্ছে!
আমাকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না : সরকারপ্রধান বলেন, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ আমার দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে তখন আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মিলিটারি ডিক্টেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা স্লোগান দিয়েছি, ‘আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব এবং নির্বাচনের যে সংস্কারগুলো ছবিসহ ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচন কমিশন যেটা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সেটাকে আলাদা করে দিয়ে, বাজেট আলাদা করে দিয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করেছি। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে জনগণের ক্ষমতা বন্দি করে রাখা হয়েছিল, সেই ক্ষমতাকে বের করে আমরাই তো এনেছি। আমাকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শেখাতে হবে না। বাংলাদেশে মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের যে আন্দোলন, সেটা আমরা করেছি। সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও নির্বাচন হয়েছে বলে জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে। এখন আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে।
আবারও অগ্নিসন্ত্রাস করলে তখন ছাড়ব না : হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলন করুক, কোনো বাধা তো দিচ্ছি না। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা তারা ছড়াচ্ছে, কিছু মানুষ তো তাদের অবৈধ টাকা পাচ্ছে। তবে তারা যদি মানুষের ওপর আঘাত করে, আবারও অগ্নিসন্ত্রাস করলে তখন ছাড়ব না। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে জনগণ আছে। তাদের ডাক দিলে অতীতের মতো তারাই (জনগণ) তাদের ঠান্ডা করে দেবে। ক্ষমতায় থাকতে তারা (বিএনপি-জামায়াত) আমাদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে তার এক কণা পরিমাণ যদি আমরা করতাম তবে তাদের অস্তিত্ব থাকত না। আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করা লাগে না, দেশের জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়। তারা জানে নৌকায় ভোট দিয়েই স্বাধীনতা পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়ন পেয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, যারা জানে নির্বাচন করে জনগণের ভোট পাবে না, তারা (বিএনপি) সব জায়গায় গিয়ে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের তো কোটি কোটি টাকা। ক্ষমতা থেকে এত বেশি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে এবং এত বেশি টাকার মালিক হয়ে গেছে, অবাধে সে টাকা খরচ করে যাচ্ছে তারা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন, বিএনপি এত টাকা কোথা থেকে পায়, সেই খবর যাতে নেওয়া হয়।
নিষেধাজ্ঞা দেবে আবার নিরাপত্তা চাইবে, এটা কেমন কথা : ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তাঁর ও দূতাবাসকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়েছেন, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমেরিকা সফরে নিরাপত্তা উপদেষ্টার সামনে আমার অ্যাম্বাসাডরকে কী নিরাপত্তা দেওয়া হয় জানতে চেয়েছি। বলা হলো যে, কোনো বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয় না। আমরা তো তাদের দূতাবাসে ১৫৮ জন পুলিশ ডেপ্লয় করেছি। তাদের রাষ্ট্রদূতকে তো গানম্যান দেওয়া আছে। তিনি বলেন, হোলি আর্টিজানের পর কয়েকটি দেশ শঙ্কিত ছিল। তখন তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন অনেকেই তা ডিমান্ড করে। এখন তো আর সেই অসুবিধা নাই। এজন্য উইথড্র করা হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রত্যেকটি দূতাবাসে কিন্তু তাদের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থাও আছে। আমাদের অ্যাম্বাসাডর তো নিরাপত্তা পায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় তো প্রতিদিন গুলি হয়। স্কুল, রেস্টুরেন্টে গুলি হয়, বাসার ভিতরেও গুলি হয়। আমি তো শঙ্কায় থাকি বাঙালিদের নিয়ে। তাদের ওখানে শিশুদেরও মারছে। যত্রতত্র গোলাগুলি এটা তো তাদের আগে সামাল দেওয়া উচিত। সেখানে সমস্যা আছে, কিন্তু আমাদের এখানে কোনো সমস্যা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো ভালো কাজ করছে। একদিকে নিরাপত্তা বাহিনীকে নিষেধাজ্ঞা দেবে আবার তাদের কাছে নিরাপত্তা চাইবে, এটা কেমন কথা?
বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা : শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না। তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপরে। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সুশীলসমাজের সমালোচনা করে বলেন, কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি। কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এরকম বক্তব্য শুনলে মনে হয়, তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভিতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই, যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না তারা আবার বিরোধী দল কীসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়াল, সেটাকে কিন্তু বিদেশে কখনো বিরোধী দল হিসেবে ধরে না। বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিট নেই তাদের বিরোধী দল হিসেব করে তো রাখা যায় না। বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এতগুলো টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোয় যে যা পারছেন, টক কথা মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। বলেন কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সারা দিন কথা বলার পর যদি বলেন আমাদের কথা বলতে দেয় না। বিএনপির তো মাইক একটা লাগানো থাকে। আর বলেন, আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করত। আমরা যদি তার একটা কানাও (অংশ) করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকত না। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ- প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেল। আমরা তো তাও খেয়ে-পরে আছি। একবার আমেরিকায় বা ইংল্যান্ডে যান, বিভিন্ন দেশে যান, দেখুন সেখানকার মানুষের কী অবস্থা!
সব বন্ধ করে বসে থাকি, রিজার্ভ ভালো থাকবে : রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যদি বলে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিই, পানি দেওয়া বন্ধ করে দিই, সার দেওয়া বন্ধ করে দিই। সব বন্ধ করে বসিয়ে রাখি, আমাদের রিজার্ভ ভালো থাকবে। তিনি বলেন, করোনার সময় আমদানি বন্ধ ছিল, যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ ছিল। তখন তো রিজার্ভ বেড়েছিল। এরপর যখন সব খুলে গেল, সবকিছু আমদানি শুরু হলো। তখন রিজার্ভ কমবে, এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা যখন ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন রিজার্ভ ১ বিলিয়নও ছিল না। ছিল শূন্য দশমিক ৭। আমি যখন ’৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন রিজার্ভ ছিল বিলিয়নের নিচে। যেটুকু বেড়েছে, আমাদের সরকারই বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা তো ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমরা ভর্তুকি দেব? বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেছে সবাই, ভর্তুকির সুযোগ নিচ্ছে অর্থশালী বড়লোকেরা। এখন একটা স্লট ঠিক করব কতটুকু সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। তাদের জন্য আলাদা দাম। তার থেকে বেশি যারা করবে তাদের জন্য আলাদা দাম। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি ওইভাবে একটা স্লট করতে। যে বেশি ব্যবহার করবে, তাকে বেশি দামে কিনতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার ৭৭ বছর বয়স। ১৫ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। এ পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে হারিয়েছি। আমি এখানে কিছু পেতেও আসিনি, নিতেও আসিনি। আমি এসেছি দেশের মানুষকে দিতে। আজ দেশ একটা মর্যাদা পাচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যদের মনোনয়ন দেব : আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কী কী অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সেটাই আমরা বিবেচনায় দেখব, বিবেচনা করব। প্রতি ছয় মাস পর পর আমি কিন্তু সার্ভে করি। কারও পজিশন খারাপ হলে সরাসরি মুখের ওপর বলে দিই। আমরা এ ব্যাপারে সচেতন বলেই নির্বাচনে জনগণের আস্থা পাই, ভোট পাই এবং নির্বাচনে জয়ী হই।
শুধু নিজে পয়সা কামালে হবে না, সাংবাদিকদেরও দেখতে হবে : ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের মালিকদের উদ্দেশে বলেন, শুধু নিজেরা পয়সা কামালে হবে না, যাদের দিয়ে কাজ করাবেন তাদের (সাংবাদিকদের) ভালোমন্দ তো দেখতে হবে। ওয়েজবোর্ড আমরা দিয়েছি, এটা কার্যকরের দায়িত্ব মালিকদের। তিনি বলেন, মালিকদের আবার কমিটি আছে, তারা আবার সিদ্ধান্ত নেয়। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু মেসেজ দেওয়ার আমরা দেব। এখানে মালিকদের যা করার তা করা উচিত। শেখ হাসিনা বলেন, এখানে যারা মালিক বসে আছেন তাদের আমি বলব, ওয়েজবোর্ড কার্যকর করে দিয়েন। সাংবাদিকরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের জন্য সার্ভিস দিয়ে থাকে, কাজ করে। তাদের ভালোমন্দ আপনাদের তো দেখতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগে প্রয়োজন গণসচেতনতা : ডেঙ্গু মহামারি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু নিজের ঘরবাড়ি না, ছাদ থেকে শুরু করে আশপাশের অঞ্চলেও প্রত্যেকটা এলাকাভিত্তিক সবাই যদি একটু উদ্যোগ নেয় তাহলে ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা, কোথায় মশাটা জন্মাচ্ছে সেই জিনিসটা দেখা। শুধু নিজের ঘরে না, নিজের ঘরের বাইরেও রাস্তায় বা আশপাশে পাড়া-প্রতিবেশী মিলেই কিন্তু মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো যেন তৈরি হতে না পারে এ ব্যাপারে সবার কিন্তু দায়িত্ব থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্যমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পরিচালন খাতে সরকার কর্তৃক গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে মোট উপহারভোগীর সংখ্যা ১০ কোটি ৬১ লাখ ১৩ হাজার ৭৬৩। দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে ১০ কোটিকেই আমরা নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।