সামনে পুলিশ প্রটোকলের গাড়ি। চারপাশে মোটরসাইকেলের বহর। সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলছে কালো রঙের একটি প্রাইভেটকার। হরহামেশাই এমন দৃশ্যের সাক্ষী হন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার মানুষ। ওই গাড়িতে থাকা ব্যক্তিটির নাম জাকির হোসেন জুমন। তিনি নিজে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন। তবে তার বাবা পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বাবার ক্ষমতার বদৌলতে নিজেও পুলিশ প্রটোকল নিয়ে ঘুরে বেড়ান এলাকায়। সঙ্গে থাকে গানম্যান। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি মূর্তিমান আতঙ্ক। এমনকি মন্ত্রণালয় পরিচালনায়ও নেপথ্যে ভূমিকা রয়েছে তার। উৎকোচের বিনিময়ে ঠিকাদারি কাজ বরাদ্দ দেন।
শুধু ছেলে নন, মন্ত্রীর ভাই, ভাগনেসহ স্বজনরা লুটেপুটে খাচ্ছেন দুই উপজেলার সব। পাহাড়ের জায়গা দখল করে বাংলো নির্মাণ, বনের গাছ সাবাড় করে অবৈধ করাতকল, জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে ঠিকাদারি কাজ, ইউপি নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন, মন্ত্রণালয়ে বদলি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রীর ছেলে এবং স্বজনদের বিরুদ্ধে। এমনকি মাদক এবং স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের সহায়তা করার বিষয়টিও ওপেন সিক্রেট।
সরেজিমন বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়, সবুজ শ্যামলে সুশোভিত দুটি উপজেলা। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেই খানিকটা খটকা লাগে বড়লেখা পৌরসভা এলাকায় গেলে। কারণ, উপজেলার প্রধান সড়কে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে একটি বৃক্ষেরও অস্তিত্ব নেই। যদিও পৌরসভার প্রধান সড়কের পাশ ঘেঁষেই মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের বাড়ি। শুধু তাই নয়, মন্ত্রীর বাড়ির সামনে এবং পেছনে হাত দশেক দূরত্বে দুটি করাতকল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই করাতকলের জন্য পাহাড় এবং বন উজাড় করে গাছ কাটা হয়। আর এসব গাছ চিরে কাঠ বানানো হয় মন্ত্রীর বাড়ির পাশের করাতকলে। আর এই করাতকলের মালিক মন্ত্রীর ভাগনে কায়সার পারভেজ। আইনকানুন এবং প্রশাসনকে থোরাই কেয়ার করে এসব করাতকলে চলছে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন।
মো. শাহাব উদ্দিন গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। গত ১৫ বছরজুড়েই নিজের নির্বাচনী এলাকায় জড়িয়েছেন নানা বিতর্কে। যার বেশিরভাগের পেছনেই নিজের ছেলে, খালাতো ভাই এবং ভাগনেরা জড়িত। বাবা মন্ত্রী হওয়ার পরই ছেলে জাকির হোসেন জুমন লন্ডন থেকে দেশে চলে আসেন। যদিও নিয়মিতই লন্ডনে আসা-যাওয়া করেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রায়ই পরিবারসহ বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণের বিপুল অঙ্কের টাকার উৎস কোথায়?বিস্তারিত