ভিসানীতি নিয়ে বিএনপির ভাবনা

ভিসানীতি নিয়ে বিএনপির ভাবনা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র যদিও ভিসা নিষেধাজ্ঞা কাদের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে তা সরাসরি উল্লেখ করেনি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরু করায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

তবে অভিজ্ঞ কূটনীতিকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ-বিএনপি নির্বিশেষে বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি কোনো সুখবর নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ বাণিজ্য সম্পর্ক, বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স ঘিরে সম্পর্ক রয়েছে। ফলে এই দেশটি থেকে এমন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক নয়।

ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগকে ইতিবাচকভাবে দেখি বলে মন্তব্য করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক উইংয়ের সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তারপর এখন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে। আন্তর্জাতিক মহলের এই সরকারের ওপর কোনো আস্থা নেই।’

বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পরই বিএনপি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে- সম্প্রতি এমন ঘোষণায় নেতাকর্মীরা আরো বেশি চাঙ্গা হয়েছে।

‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি আওয়ামী লীগের জন্য খুবই লজ্জাজনক মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে বর্তমান সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার তাদের অধীনে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হবে বলে বিদেশিদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কিন্তু দেশবাসীর পাশাপাশি বিদেশিরাও দেখেছে এর অধীনে অনুষ্ঠিত আগের দুটি নির্বাচনের কোনো মূল্য ছিল না।’

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসানীতিকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ক্ষমতাসীনদের ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে বড় ধরনের সিগন্যাল। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ভোট রিগিং হচ্ছে, ভোটের দিন ছাড়াও প্রতিদিন ভোট রিগিং হয় বাংলাদেশে। এটা বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। ভিসানীতিতে একেবারে সরাসরি যাদের কথা বলেছে এবং তাদেরকে যে ম্যানশন করেছে- এটা একটা বড় পদক্ষেপ। এটা তাদের (ক্ষমতাসীন দল) জন্য বড় মেসেজ’।

ভিসানীতি প্রয়োগই শেষ কথা নয়’ বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন কোনো দেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে তখন তা দিন দিন কঠোর হয়। তাই ভিসানীতি প্রয়োগই শেষ কথা নয়। এরপর আরও বড় ধরনের পদক্ষেপও আসতে পারে। তখন দেশে নানা ধরনের সংকট তৈরি হবে। অর্থনৈতিকভাবে দৈন্যদশার মধ্যে পড়বে দেশ। দুঃখজনক বিষয়ক হলো, সরকারের যে কোনো উপায়ে ক্ষতায় থাকার স্বৈরাচারী মনোভাব সারা দেশের মানুষকে ভোগাতে শুরু করেছে।’

প্রসঙ্গত, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সহায়তার লক্ষ্যে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন। তখন তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে-এমন বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার ও বিরোধী রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অর্থ হলো-ভোট কারচুপি, ভোটারকে ভয়ভীতি দেখানো, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে বাধাদান, রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, মিডিয়াকে মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া। এসব কর্মকাণ্ডের জন্যও ভিসানীতির প্রয়োগ হতে পারে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ