পোশাক শ্রমিকদের এবার নীরব বিক্ষোভ বেরিয়ে গেলেন কাজ ফেলে

বেতন বাড়ানোর ঘোষণাও অসন্তোষ কমেনি পোশাক শ্রমিকদের। এবার নীরব শুরু করেছেন আশুলিয়া অঞ্চলের বেশ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। আজ সোমবার কারখানায় এসেও কাজে যোগ না দিয়ে বের হয়ে গেছেন তারা। তবে অন্যান্য দিনের মতো এদিন তারা সড়ক অবরোধ বা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেননি বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

মজুরি কাঠামোর ছয়টি গ্রেড সংশোধন করে বেতন বাড়ানোর ঘোষণার পর আজ সকালে কারাখানায় স্বাভাবিকভাবেই যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই তারা বের হয়ে যান। শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এনভয় গ্রুপ, হামিম গ্রুপ ও শারমিন গ্রুপসহ ২০/২৫টি কারখানার শ্রমিকরা কাজ ফেলে চলে গেছেন। জামগড়া, নরসিংহপুর ও বেরন এলাকার অন্তত আটটি কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

গত ৬ জানুয়ারি থেকে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছিল ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা। পরে এর প্রেক্ষাপটে মালিক-শ্রমিক ও প্রশসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটি রোববার বৈঠক করে ছয়টি গ্রেড সংশোধন করে বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।

সরকারের ঘোষিত মজুরির কয়েকটি গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি করে গ্রেডগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। স্বল্পতম সময়ে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে এবং ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে বলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।

সংশোধিত কাঠামো অনুসারে এক নম্বর গ্রেড মজুরি এখন থেকে হবে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা। আগে এই গ্রেডে মজুরি ছিল ১৭ হাজার ৫১০ টাকা। দুই নম্বর গ্রেডে মজুরি হবে ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা। আগে এই গ্রেডে মজুরি ছিল ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা। তিন নম্বর গ্রেডে এখন থেকে মজুরি হবে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা। আগে এই গ্রেডে ছিল ৯ হাজার ৫৯০ টাকা। চার নম্বর গ্রেডে সংশোধিত কাঠামো অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি হবে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা। আগে ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ২৪৫ টাকা। পাঁচ নম্বর গ্রেডে সংশোধিত কাঠামো অনুয়ায়ী মজুরি হবে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা যা আগে ছিল ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা। ৬ষ্ঠ গ্রেডে নতুন মজুরি নির্ধারণ হয়েছে ৮ হাজার ৪২০ টাকা। আগে ছিল ৮ হাজার ৪০৫ টাকা। তবে ৭ম গ্রেডের মজুরি কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এই গ্রেডে ৮ হাজার টাকা রাখা হয়।

কাজে না ফিরলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে: বিজিএমইএ সভাপতি

আজ সোমবার থেকে যেসব শ্রমিক কারখানায় ফিরবেন না তাদের কোনো মজুরি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। শ্রমিকরা কাজে ফিরে না গেলে পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। গতকাল রবিবার পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনার কর্মস্থলে ফিরে যান। উত্পাদন কাজে অংশগ্রহণ করুন। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা আগামীকাল (সোমবার) থেকে কাজ শুরু না করলে শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা মোতাবেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। শ্রমিকদের মজুরি বোর্ডে বৈষম্য আছে বলে তাদের আন্দোলনে নামিয়েছে একটি কুচক্রী মহল। পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি মহল চক্রান্ত করছে। বৈষম্যের কথা বলে শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে, কর্মবিরতি করতে প্ররোচিত করা হচ্ছে। আমরা একাধিকবার শ্রমিকদের অনুরোধ করেছি কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা কাজে ফেরেনি। নতুন বেতন কাঠামোয় বৈষম্য আছে এই উসকানি দিয়ে পোশাক খাতের শ্রমিকদের অশান্ত করা হচ্ছে। পোশাক শিল্প খাতকে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।’ এ সময় সরকারের কাছে ব্যবসায়ী মালিকদের জান ও মালের নিরাপাত্তা চান বিজিএমইএ সভাপতি। বিজিএমইএ’র সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

অর্থ বাণিজ্য জাতীয় শীর্ষ সংবাদ