হুন্ডির প্রসার এই অঞ্চলে প্রাচীনকাল থেকেই, যা কখনোই বন্ধ থাকেনি। সেই হুন্ডি এখন অনেক বেড়েছে। অর্থ পাচার বেড়েছে বলেই হুন্ডির চাহিদাও এখন বেশি। খোলাবাজারে ডলারের দর এখন বেশি বলেই যে কেবল প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স হুন্ডির মাধ্যমে আসছে তা নয়। বরং অর্থ পাচার বাড়ছে বলেই হুন্ডিও বেড়েছে। তবে যারা ধনী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত, তারা অর্থ পাচার করে মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে। আর যাঁরা ঘুষ-দুর্নীতি, কর ফাঁকি, চোরাচালান বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন, তাঁরা অর্থ পাচারের জন্য বেছে নেন হুন্ডিকেই।
হুন্ডির ইতিহাস
একটা সময়ে হুন্ডি ছিল বৈধ ও নিরাপদ। এখনো তা নিরাপদ, তবে বৈধ না। অষ্টম শতাব্দীতে চীন থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত সিল্ক রুটে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হতো। ডাকাতির ভয়ে তখন নগদ অর্থ বা মূল্যবান কিছু বহন করা নিরাপদ ছিল না। তখন থেকেই হুন্ডির প্রসার।
হুন্ডি বা হাওয়ালা আসলে একই জিনিস। হাওয়ালা কথাটা এসেছে আরবি থেকে। আর হুন্ডি এসেছে সংস্কৃত থেকে। হাওয়ালা ভারতে বেশি ব্যবহার হয়, হুন্ডি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাতেও হাওয়ালা কথাটা প্রচলিত। এর অর্থ হচ্ছে লেনদেন বা কোনো কিছু পাঠানো।
ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম বাংলাপিডিয়ায় লিখেছেন, হুন্ডি মোগল অর্থনীতির অধীনে বিকশিত একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ লেনদেন পত্র। সতেরো শতকে বাংলা থেকে দিল্লিতে ভূমি রাজস্ব পাঠানো হতো কফিল অথবা গরুর গাড়ি দিয়ে। এ পদ্ধতি ব্যয়বহুল এবং অনিরাপদ ছিল। এ ছাড়া রাজকীয় অর্থ পাঠানোর জন্য স্থানীয় অর্থনীতি মুদ্রা-সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এ সময়েই হুন্ডি বাজার বিকশিত হয়। মোগল আমলের পরবর্তী সময়ে বণিকদের মধ্যে জগৎ শেঠ ও মাহতাব চাঁদের হুন্ডি গৃহ খুব বিখ্যাত ছিল। আঠারো শতকের শেষার্ধে বাংলায় আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার উৎপত্তির ফলে উনিশ শতকের প্রথমার্ধে হুন্ডি ব্যবস্থার পতন শুরু হয়। তবে একসময় যে হুন্ডি ছিল নিরাপদ অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা, সেটাই এখন অর্থনীতির জন্য বড় সমস্যা।
ফারসি ভাষায় মোগল সাম্রাজ্যের ইতিহাস লিখেছিলেন সুজান রাই ভান্ডারী। আওরঙ্গজেবের আমলে ১৬৯৫-৯৬ সময়ে লেখাটি শেষ হয়েছিল। খুলাষতুত তওয়ারিখ নামের বিখ্যাত সেই গ্রন্থে সে সময়ের ব্যাংকব্যবস্থা ও হুন্ডির বেশ ভালো একটি বর্ণনা পাওয়া যায়।বিস্তারিত