টার্নিং পয়েন্ট ২৮ অক্টোবর

টার্নিং পয়েন্ট ২৮ অক্টোবর

বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে ২৮ অক্টোবর। ১৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের এক সমাবেশ থেকে এমন ঘোষণা দেয় দলটি। আর এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নানা সমীকরণ চলছে। বিএনপি মাঠে নামলে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এই দলটি ১৮ অক্টোবর জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে বিরোধী দলকে শায়েস্তা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ফলে ২৮ অক্টোবর রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছেন কেউ কেউ। বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে নাকি দলটির অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে তা নিয়ে নানা কথা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো প্রকাশ্যেই বলছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র করছে। এদিকে ১৮ অক্টোবর বিএনপি ক্ষমতাসীন দলকে এক প্রকার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে স্পষ্টভাবে বলেছেন, সিদ্ধান্ত নিতে— তারা কি মানে মানে বিদায় নেবেন নাকি বিতাড়িত হবেন। অর্থাৎ আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের আগেই পদত্যাগ করতে বলছে বিএনপি, অন্যথায় বাধ্য করা হবে— এই হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন রাজপথের প্রধান বিরোধী দলের এই অন্যতম শীর্ষ নেতা। ফলে দেশের রাজনীতিতে আগামী ২৮ অক্টোবরকেন্দ্রিক দিন গণনা শুরু হয়েছে। চায়ের আড্ডায়, অফিস-আদালত কিংবা যেকোনো লোকালয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন— ২৮ অক্টোবর বা তার পর কী হবে দেশে? বিএনপি কি পারবে আন্দোলন সফল করতে, আওয়ামী লীগ কি পারবে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখবে। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ২৮ অক্টোবরকেন্দ্রিক উদ্বিগ্ন রয়েছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

রাজনীতির গতিপথ ঠিক কোনো দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে ভাবছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজ নিজ দাবিতে অনড় অবস্থানে থাকায় আলোচনায় বসা বা সংলাপে বসে বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তারা মনে করছেন, বিরোধী দলগুলো যদি কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করে তাতে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কাউন্টার দেয়া ঠিক নয়। গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে বিরোধী দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে, কিন্তু যদি তারা আইন লঙ্ঘন করে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পদক্ষেপ নেবে। বিশ্লেষকদের ভাষ্য এখন পর্যন্ত বিরোধী দলগুলো রাজপথে এমন কোনো শোডাউন দিতে পারেনি যাতে সরকার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে। বিরোধী দল ও ক্ষমতাসীন দলকে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ছাড় দেয়ার মানসিকতা রাখতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচি ও আওয়ামী লীগের পাল্টা প্রতিরোধের ঘোষণা সাধারণ মানুষের মনে উৎকণ্ঠা রয়েছে উল্লেখ করে রাজনৈতিক চলমান অচলাবস্থায় করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এখন করণীয় হচ্ছে— নিজেদের উন্নয়ন কার্যক্রম সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা, নির্বাচনি প্রচারণা ব্যস্ত হওয়া এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে কাজ করা। জনগণের স্বার্থে কাজ করে জনগণকে নিজেদের সমর্থনে নিয়ে আসা।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনোভাবে আওয়ামী লীগের উচিত হবে না বিএনপি ঘোষিত ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির কাউন্টার দেয়া। বিএনপি কর্মসূচি দিতে চাইলে করতে পারে, কোনো সমস্যা তো নেই। তারা যদি আইন অমান্য করে সেটি দেখবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।’ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে শান্ত থাকার পরামর্শ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েল সাবেক এই অধ্যাপকের।

বিএনপির কর্মসূচি ও আওয়ামী লীগের প্রতিরোধ ঘোষণায় সাধারণ মানুষ উদ্বেগ স্বাভাবিক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপত ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো রাজপথে করা আন্দোলন যথেষ্ট নয়।’

তিনি  এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বিএনপি রাজপথে সমাবেশ করছে, আওয়ামী লীগও সমাবেশ করছে। বিএনপির সমাবেশেও লোক আসছে, আওয়ামী লীগও সমাবেশ করে দিখিয়ে দিচ্ছে তাদের সাথেও জনগণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের দাবি মানা খুবই জরুরি ভাবছেন না ক্ষমতাসীনরা।’ তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল যদি দাবি আদায় করতে চায় তাহলে তাদেরকে ঢাকায় লাখ লাখ লোক জড়ো করে এবং একই সঙ্গে দেশজুড়ে জনগণকে রাজপথে নামিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে— জনগণ তাদের দাবির স্বপক্ষে রয়েছে। কিন্তু বিএনপি সেটি পারছে না।’ কর্মসূচিতে ৪০-৫০ হাজার মানুষ অংশ নিলে সেটি গণআন্দোলন বা জনগণের আন্দোলন হয় না বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বাংলদেশজুড়ে আন্দোলন হলে, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে তখন স্টেকহোল্ডাররা নড়েচড়ে বসবে।

তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে উল্লেখ করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর যদি বিএনপি নির্বাচনে না যায় তাহলে এক ধরনের রাজনীতি তৈরি হবে, যার লক্ষণ এখনই দেখা যাচ্ছে। আর যদি যায় তাহলে এক ধরনের রাজনীতি হবে।’ এদিকে, বর্তমান পরিস্থিতে সংলাপে হতে হলে জনগণের বড় দাবি সামনে নিয়ে আসতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পুরো দেশজুড়ে মানুষ যদি দাবি করে (নির্বাচনকালীন সরকার) তখন সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে, এর আগে নয়। কেননা, দুই দলের প্রধান ছাড়াই সমাবেশ আহ্বান করা হলে উভয় দলের সমাবেশেই হাজার হাজার লোক হয়, ফলে এতে সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে তেমন প্রভাব পড়ে না।

জাতীয় রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ