অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজের দামও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আলুও পেপে বাদে অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকার নিচে মিলছে না। ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া তিন নিত্যপণ্যের ডিম, আলু- পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ দামে বিক্রি করছে না ব্যবসায়ীরা। এক মাস ৭দিনেও বাজারে কার্যকর হয়নি সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম। কার্যকারি না হওয়া সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। সরকার নির্ধারিত দাম পেঁয়াজ কেজি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বিক্র হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকায় এবং ১৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ডিম। তবে প্রতিকেজি আলুর সরকার নির্ধারিত দাম ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা। মতিঝিল কলোনি মসজিদ মার্কেটে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা করে। সরকার নির্ধারিত দাম মানছে না তারা
[২]এদিকে কয়েকদিন আগে রাজধানীসহ সারাদেশে টানা বৃষ্টিপাত হয়। সেসময় বাজারগুলোতে পণ্যের সরবরাহ কমে দাম বেড়ে যায়। সেই অস্থিরতা এখনো কাটেনি বরং উল্টো সংকট যেন দিন দিন আরও তীব্র হচ্ছে। সবজি, মাছসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এখনো কোনো পণ্যের দাম কমেনি। বরং একটু একটু করে আরও বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে মিলছে না আলু পেঁপে ছাড়া অন্য কোনো সবজি। অধিকাংশ বিক্রি হচ্ছে একশো টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে।
[৩]অন্যদিকে, প্রতি কেজি চাষের মাছের দাম এখন ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। আর দেশি মাছগুলোর দাম যেন আকাশছোঁয়া, বিক্রি হচ্ছে আগের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তিতে।
[৪]বেশ কয়েক মাস হলো ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা। শেষ এক সপ্তাহে প্রতি হালি ডিমের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়বাজারে কিনলে ডিমের ডজন পড়ছে ১৬০ টাকা, যা পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের একটি ডিম খেতে গুনতে হচ্ছে ১৫ টাকা। অথচ সরকার প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া আরেক পণ্য পেঁয়াজ। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি যার দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এখন দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
[৫]পণ্যের দাম বাড়ায় নি¤œ ও নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষদের ওপর চাপ আরও বাড়ছে। বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে তাদের। অধিকাংশ মানুষ অস্বাভাবিক বাজারদরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
[৬]শান্তিনগর বাজারের ক্রেতা রিকশাচালক কামাল বলেন, দামের চোটে আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। আগে মাছ-মাংস না খেতে পারলে শাকসবজি খেয়ে থাকতাম। এখন সেটাও সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। এভাবে চললে গরিব মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, খেতে সবজি পচে নষ্ট হয়েছে। সরবরাহ বিঘœ হওয়ায় দাম বেড়েছে।
[৭]বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা এবং লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করলা, কচুরমুখি, বরবটি, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। আর ঢেঁড়স, পটল, ঝিঙা, চিচিঙা ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। কম দামের মধ্যে মুলার কেজি ৫০-৬০ টাকা আলু ৫০ টাকা আর পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা।
[৮]দর বাড়তি মাছ-মাংসেরও। অপরিবর্তিত রয়েেেছ ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কম আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনেন পাঙাশ, চাষের কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ। বাজারে এসব মাছের কেজি এখন ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রুই, কাতলা, কালিবাউশ ও মৃগেল মাছ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়।
[৯]শান্তিনগর বাজারের মাছ বিক্রেতারা বলেন, এমনিতেই কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছের দাম বেশি ছিল। এর মধ্যে ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে। সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম বেড়েছে। এবিষয়ে মতিঝিল এজিবি কলোনী ক্রেতা খালেদা বলেন, সরকার কোনো কিছুর দাম বাড়ালে দোকানিরা সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন তারা চিন্তা করে না, পণ্যটি আগে কম দামে কেনা। আর সরকার কোনো পণ্যের দাম কমালে দোকানিরা সঙ্গে সঙ্গে দাম কমায় না। তখন তারা নানা ধরনের অজুহাত দেখায়। আসলে বেশি লাভের আশায় বিক্রেতারা বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। আর বিড়ম্বনায় পড়ে ভোক্তারা। খালেদা আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বেঁধে দেওয়া তিন নিত্যপণ্যের ডিম, আলু- পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ দামে বিক্রি করছে না ব্যবসায়ীরা এক মাসের বেশি হলেও।
[১০]দাম কমলেও ভোক্তাকে বেশি টাকা দিয়েই পণ্য কিনতে হয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এবিষয়ে বেসরকারী কোম্পানির এক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন সব কিছুর দাম বাড়তি। আমার বেতন ৩০ হাজার টাকার কাছাকাছি। আগে সারা মাসের খরচ শেষেও ২- ৩ হাজার টাকা বেচে যেত। সেখান থেকে কিছু টাকা যেত সঞ্চয়ে, কিছু টাকা মা বাবাকে দিতাম। আর স্ত্রী নিয়ে ঘোরাঘুরি, কেনাকাটায়। এখন আর পারি না।