ছদ্মবেশী ভয়ঙ্কর নারী

মির্জা মেহেদী তমাল

পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংসের ভুনা আর সবজি-সবকিছুই তৃপ্তি নিয়ে খেলেন আহমেদ পরিবার। খেতে খেতে ভাড়াটিয়ার রান্নার প্রশংসা করছিলেন সবাই। বলছিলেন, আহ! বহুদিন পর এমন মজাদার রান্না খেলাম। বাড়িওয়ালা আহমেদ এতটাই উচ্ছ্বসিত যে, ফিরনি দুবার নিয়ে খেলেন। কিন্তু এই ভালো লাগার চিত্র বেশিক্ষণ ছিল না। মজাদার খাবার খেয়ে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। খাবার খেয়ে একের পর এক জ্ঞান হারান বাড়িওয়ালা পরিবারের নয় সদস্য। পরে বাড়িওয়ালার ঘরের সর্বস্ব লুট করে পালায় সেই ভাড়াটিয়া। ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকার আলী আহমেদের বাড়ির।

ডেমরায় ভাড়াটিয়ার দাওয়াত খেয়ে বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন বাড়িওয়ালা বৃদ্ধ দম্পতি। ভাড়াটে সেজে বাড়িতে ঢুকে ঘরের জিনিসপত্র লুটে নিয়ে যায় কয়েক নারী। তারা ভাড়া নিতে এসে বৃদ্ধ বাড়িওয়ালার সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলে। এরপর অজ্ঞান করে বাড়িঘরের মালামাল লুটে নিয়ে পালায়। ঘণ্টাখানেক পর লোকজন জানতে পারেন, বৃদ্ধ দম্পতি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। হাসপাতালে নেওয়া হয় তাদের। কিন্তু বাঁচানো যায়নি। সর্বশেষ গতকাল এমন আরেক ঘটনা ঘটে রাজধানীর সায়েদাবাদে। বাড়ি ভাড়া নিতে এসে দম্পতিকে অচেতন করে স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়েছে কজন অজ্ঞাত নারী। এ টি এম সোলাইমান (৭০) ও তার স্ত্রী নাজমা বেগমের (৫৫) অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়ের জামাই তাজুল ইসলাম জানান, করাতিটোলায় তাদের নিজ বাড়ির ছয়তলা ভবনের নিচতলায় থাকেন তারা। তিনি জানতে পেরেছেন, সকালে তিনজন নারী বাসা ভাড়ার কথা বলে তাদের বাসায় এসেছিল। এরপর থেকে তারা অজ্ঞান। তাদের শরীরে থাকা সোনাদানা সব লুটে নিয়ে পালিয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে এমন ভয়ঙ্কর নারী ছড়িয়ে পড়েছে। যারা বাসা ভাড়ার কথা বলে ভাড়াটিয়ার ছদ্মবেশ নেয়। এরপর ভাড়িওয়ালাকে অজ্ঞান করে মালামাল লুটে নিয়ে পালায়। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কয়েক বছর ধরে নতুন এক ধরনের চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ চক্রটি বাড়ি ভাড়া হবে বা টু-লেট দেখে ভাড়া নেওয়ার নাম করে মালিকের বাড়ি যায়। এরপর কৌশলে বাড়িওয়ালাকে খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে বাড়ির দামি জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা লুট করে। অনেক সময় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে ভাব জমিয়েও এমন কাজ করে চক্রটি। তবে তাদের টার্গেটে থাকে বৃদ্ধ বাড়িওয়ালা। যাদের খুব সহজে কাবু করতে পারে। এমন একটি চক্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে সম্প্রতি। এ চক্রটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ একই পরিবারের নয়জনকে অচেতন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। গ্রেফতারের সময় ভাড়াটিয়া এই দম্পতির কাছ থেকে সোনার অলঙ্কার, ল্যাপটপ, ক্যামেরাসহ অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়। প্রতারক এই চক্রকে রাজধানী ঢাকার মান্ডা এলাকার জালাল মিয়ার ষষ্ঠতলা ভবনের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই চক্রের সদস্যদের অধিকাংশই নারী। তারা মূলত অজ্ঞান পার্টি। ভাড়াটিয়ার ছদ্মবেশে তারা এখন বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়েছে। কখনো বাসা ভাড়া নিয়ে, আবার কখনো বাসা ভাড়া নিতে এসেই অজ্ঞান করে সর্বস লুটে নিয়ে যায়। পুলিশ বলছে, ভাড়া নিতে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে অবশ্যই শক্ত সামর্থ্য লোকজনকে কথা বলতে হবে। বয়স্ক লোকদের এ কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। তাছাড়া এমন ঘটনার সন্দেহ হলে, অবশ্যই পুলিশকে জানাতে হবে।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ