গাজার হাসপাতালগুলো জরুরি রসদের জন্য মরিয়া হয়ে আছে। শনিবার মিসর থেকে ২০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত গাজায় জ্বালানি প্রবেশ করেনি।
সোমবার ইউনিসেফ হুঁশিয়ার করে বলেছে, কমপক্ষে ১২০টি শিশু ইনকিউবেটরে রয়েছে।
এর মধ্যে ৭০টি অপরিণত নবজাতক ভেন্টিলেটরে রয়েছে অর্থাৎ এরা সবাই জেনারেটর চালিত মেশিনের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।
ইসরাইল গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে জেনারেটর ব্যবহার করা শুরু হয়।
ফিলিস্তিনের চিকিৎসা সহায়তা বিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ফিকর শাল্লতুতের গাজার পরিচালক বলেন, জেনারেটর চলা বন্ধ হয়ে গেলে অপরিণত শিশুরা নাও বাঁচতে পারে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘ওই ওয়ার্ডে ৩২ সপ্তাহ বয়সী একটি শিশু রয়েছে, যার মা বিমান হামলায় মারা যাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে বাঁচিয়েছে।’
‘শিশুটির মা-সহ পুরো পরিবার মারা গেছে। শুধু শিশুটিকেই বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।’
এর আগে রাফা ক্রসিংয়ে জ্বালানির ট্রাক দেখা গেছে। তবে সেগুলো গাজায় ঢুকতে পেরেছে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এদিকে গত কয়েক ঘণ্টায় গাজার বেশ কয়েকটি হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু কোনো হতাহত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
ফিলিস্তিনি সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যেসব হাসপাতালের পাশে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে, আল-শিফা, এটা গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। এছাড়াও রয়েছে আল-কুদস এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল।
হামাস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে আল-কুদস হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করছে এটা ইসরায়েলি বিমান হামলা।
তারা একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের ছবি প্রকাশ করে দাবি করেছে, সেটি কুয়েতি হাসপাতালের পেছনের ভবন। এই মুহূর্তে এসব ছবি ও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর কাছে বিবিসি জানতে চেয়েছে যে তারা ওই এলাকায় হামলা চালিয়েছে কিনা। আইডিএফ এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত চার হাজার ৬৫১ জন মানুষ গাজায় নিহত হয়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৮৭৩ জন শিশু, এক হাজার ১০১ জন নারী এবং এক হাজার ৬৭৭ জন পুরুষ রয়েছে।
হতাহতের মোট সংখ্যার মধ্যে ৮৩৯ জন গাজার দক্ষিণাঞ্চলে নিহত হয়েছে। এই অঞ্চলেই গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষদের আশ্রয় নিতে বলেছিল ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সঙ্ঘাতে আরো ১৪ হাজার ২৪৫ জন আহত হয়েছে।
এর আগে গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির নেতারা ইসরায়েল-গাজা সঙ্ঘাত এবং গাজা উপত্যকায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
হোয়াইট হাউজ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং অন্য নেতারা ফোনালাপের মাধ্যমে ‘ইসরাইলের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং তার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছেন।’
একই সাথে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করারও’ আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দু’জন বন্দীকে মুক্তি দেয়ার ঘটনাকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন এবং বাকি সব জিম্মিকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।’
নেতারা গাজায় থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি ত্রাণ নিয়ে প্রথম মানবিক সহায়তার গাড়ি বহর প্রবেশের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এছাড়া মানবিক সহায়তা হিসেবে জরুরি খাবার, পানি, চিকিৎসা সেবা এবং অন্যান্য সহায়তার টেকসই ও সহজ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওই অঞ্চলে থাকা অংশীদারদের সাথে সমন্বয় করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।
গাজায় সামরিক অভিযান মাসের পর মাস ধরে চলতে পারে : ইসরাইল
ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট বলেছেন, গাজায় চলমান সামরিক অভিযান শেষ হতে ‘এক মাস, দুই কিংবা তিন মাস লাগতে পারে, কিন্তু এটি শেষ হওয়ার পর হামাস বলতে কিছু থাকবে না।’
ইসরাইলের বিমান বাহিনীর অপারেশন্স কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টারে হামলা পরিচালনা বিষয়ে ব্রিফিংয়ের পর এই কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘অভিযান পরিচালনার দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে দিনশেষে আইডিএফকে কোন কিছুই রুখতে পারবে না।’
‘গাজায় এটাই হবে আমাদের শেষ অভিযান। কারণ খুবই সহজ। অভিযান শেষ হওয়ার পর হামাস বলে কিছু থাকবে না।’
মন্ত্রী বিমান বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, পরবর্তী ধাপে বহুল প্রত্যাশিত স্থল অভিযান ‘শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে।’
তবে সেটা কবে- সে সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলেননি তিনি।
এদিকে আগামী দুই দিনে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইসরাইল সফরের কথা রয়েছে।
সূত্র : বিবিসি