২৮ অক্টোবরের সহিংসতা পরিস্থিতি জানাল সরকার, প্রশ্ন করেননি কূটনীতিকেরা

২৮ অক্টোবরের সহিংসতা পরিস্থিতি জানাল সরকার, প্রশ্ন করেননি কূটনীতিকেরা

কূটনৈতিক প্রতিবেদকঢাকা

বিএনপি প্রতিটি নির্বাচনের আগে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করতে এবং অগণতান্ত্রিক শক্তিকে উৎসাহিত করতে সহিংসতা চালায়। ২৮ অক্টোবরের সহিংসতা এরই ধারাবাহিকতা। গতকাল সোমবার ঢাকায় বিদেশি কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সরকারের এই ভাষ্য তুলে ধরেন।

গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ। ঘণ্টাখানেকের ওই ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকেরা সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন করে কিছু জানতে চাননি।

ব্রিফিংয়ের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার নাম নিয়ে বিএনপি যেসব সংঘাত-সহিংসতা করেছে, তার তীব্র নিন্দা জানাই এবং তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা দরকার।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে তারা (বিএনপি) যা করেছে, তার মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু না হয়। নির্বাচন বানচাল করার জন্য তারা এ ধরনের অপকর্ম করেছে। সে জন্য বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের ডাকা হয়েছে। তাঁদের বলেছি, ২৮ তারিখে এখানে কী হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মিথ্যা উপদেষ্টা হিসেবে একজনকে নিয়ে কী কী করা হয়েছে, সেটাও তুলে ধরেছি।’

কূটনীতিকেরা সরকারের বক্তব্যে সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁরা সন্তুষ্ট হয়েছেন কি হননি, সেটা তাঁদেরই জিজ্ঞেস করুন।’

কূটনীতিকদের কোনো প্রশ্ন না করার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা কিন্তু বলিনি যে সাইলেন্স (নীরবতা) মানে সম্পূর্ণ অ্যাগ্রি (একমত পোষণ) করেছেন। আবার আমরা এটাও বলছি না যে তাঁরা ডিজঅ্যাগ্রি (ভিন্নমত পোষণ) করেছেন। আমরা বলছি তাঁদের প্রশ্ন করার সুযোগ

দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা কোনো প্রশ্ন করেননি। তার মানে যতটুকু বুঝতে পারি আমরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছি, সেটা অন্ততপক্ষে পরিষ্কার হয়েছে। তাঁরা কনভিন্সড (রাজি হয়েছেন) কি কনভিন্সড নন, সেটা বলার দায়িত্ব আমার না। সেটা বলার দায়িত্ব তাঁদের।’

কূটনীতিকদের প্রশ্ন না করার বিষয়টি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এখানে সব রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন। তাঁরা সবাই চুপ ছিলেন। এটা ধরে নেওয়ার কারণ নেই যে তাঁরা ডিজঅ্যাগ্রি (ভিন্নমত পোষণ) করেছেন। কারণ, তাঁরা কেউ কোনো কথা বলেননি।

২৮ অক্টোবর সহিংসতার ঘটনার বিষয়টি ওই দিনই বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের বিষয়টি জানানো হলো।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর তাৎক্ষণিক যেসব ফুটেজ পাওয়া গেছে, সেগুলো বিদেশি মিশনগুলোতে পাঠানো হয়েছে। আজকে (গতকাল) আবার সহিংসতার ছবি, ভিডিও ফুটেজসহ নানা বিষয় কূটনীতিকদের দেখানো হয়েছে।

বিদেশি কূটনীতিকদের বক্তব্য কী ছিল—জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, তাঁদের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা গেছে, তাঁরা এসব দেখে স্তব্ধ হয়ে গেছেন।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল যমুনায় অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে ২০ পৃষ্ঠার একটি সরকারি ভাষ্য দেওয়া হয়। ‘ছবিতে বিএনপির নৃশংসতা’ শিরোনামের ওই উপস্থাপনায় ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ এবং হরতালে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা তুলে ধরা হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত একাধিক কূটনীতিকের কাছে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রশ্ন না করার বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁরা জানিয়েছেন, সরকার ২৮ অক্টোবর এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কী বলতে চাইছে, তাঁরা তা শুধু শুনতে এসেছিলেন। প্রশ্ন করার অভিপ্রায় তাঁদের ছিল না।

ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ছাড়াও যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালি, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, স্পেন, সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইইউর কূটনীতিক এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ব্রিফিংয়ের আগে ঢাকায় ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক সমাবেশকে ঘিরে সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল যৌথ বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সাত দেশ। তারা সহিংসতা বন্ধ করে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছে। অন্য দেশগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও নরওয়ে।

জাতীয় রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ