অবরোধ সফলে এবার কৌশলী বিএনপি ।

অবরোধ সফলে এবার কৌশলী বিএনপি ।

২৮ অক্টোবরের পর চূড়ান্ত কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। বিএনপি আগেই এই ঘোষণা দিলেও আন্দোলন সফলে কৌশলের অংশ হিসেবে ছকে পরিবর্তন এনেছে দলটি। পুরো দেশে ক্ষমতাসীনদের বেকায়দায় ফেলতে এবার শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

দলের নেতাদের মতে, ‘সেফ কৌশল’-এর অংশ হিসেবে দুই পা এগিয়ে সময়ের প্রয়োজনে তারা এক পা পেছাচ্ছেন। তবে সফলতার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে রাজধানীকেন্দ্রিক আন্দোলনের বিষয়টি মাথায় রেখেই এগোচ্ছেন তারা।

দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, মহাসমাবেশের জন্য সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন আর আন্দোলন পরবর্তীতে হবে ঢাকাকেন্দ্রিক বিএনপির এমন ঘোষণার বিষয় মাথায় নিয়েই ক্ষমতাসীনরা দলীয় ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়েছে। এজন্যই বিএনপি সারা দেশে অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। যাতে ক্ষমতাসীনরা বিরোধীদের সহজে মোকাবিলা করতে না পারে।

মহাসমাবেশে পুলিশি হামলা, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করবে বিএনপিসহ সমমনা।
তিন দিনের অবরোধে আওতামুক্ত থাকবে সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবহণের গাড়ি। প্রায় সাড়ে আট বছর পর আবারও অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। রোববার দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ টানা তিন দিনের এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে এই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছিল দলটি। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় আন্দোলন সফল করতে না পারায় ফল ঘরে তুলতে পারেনি তারা। সম্প্রতি সভা সমাবেশে দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছিলেন, ‘এবার আন্দোলন হবে ঢাকাকেন্দ্রিক’। কিন্তু হরতাল ও তিন দিনের অবরোধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে কারা সারা দেশের আন্দোলনের পুরনো ছকে ফিরেছে। ঢাকাকেন্দ্রিক আন্দোলনকে সারা দেশে নিয়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে জানা যায়, সাংগঠনিক শক্তির পরীক্ষায় বারবার হোঁটচ খাওয়া ঢাকা মহানগর বিএনপির নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা রয়েছে।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী জানুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হবে। নভেম্বরের যে কোনো সময়ে ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনের তফসিল। এই অবস্থায় কোনো ফল বের করে আনতে হলে- নভেম্বর, ডিসেম্বর পুরো দুই মাস এবং জানুয়ারির মাসের প্রথম কয়েকটি দিন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। তিন দিনের অবরোধের কর্মসূচি পর এই ধরনের আরও কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে দলটির।

সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘সর্বাত্মকভাবে’ অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর এই তিন দিন যে অবরোধ কর্মসূচি আছে তা সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আমি দেশবাসী ও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের এই অবরোধ কর্মসূচি রেলপথ, রাজপথ, মহাসড়ক, সড়ক এবং নৌ পথে এই অবরোধ চলবে। এটা হবে সর্বাত্মক অবরোধ। রাজধানীর সঙ্গে জেলার পথগুলোতে সংযোগ রয়েছে, জেলার সঙ্গে উপজেলা বা উপজেলার সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের যে পথগুলোতে সংযোগ রয়েছে মেইন পথগুলোতে অবরোধ হবে, রেলপথগুলোতে অবরোধ হবে, নৌপথগুলোতে অবরোধ হবে।’

বিএনপি ছাড়াও গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি, এনডিএমসহ সরকার পদত্যাগের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দলগুলো আলাদাভাবে অবরোধ কর্মসূচি করবে। যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে সোমবার দুপুরে জামায়াতে ইসলামীও তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

সরকার পদত্যাগের এক দফার দাবিতে বিএনপি যুগপৎভাবে বিভিন্ন দল ও জোটকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করে গত ১২ জুলাই। এরপর থেকে টানা তিন মাসে তারা ঢাকাসহ সারা দেশে রোডমার্চ, পদযাত্রা, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ-বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি করে। এরপর গত ২৮ জুলাই তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করে পরদিন ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি করেছে। সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনসহ ৯টি স্থানে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপিসহ সমমনারা। কিন্তু বিএনপির সমাবেশ শুরুর দেড় ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ হামলা চালিয়ে পণ্ড করে দেয়।

নয়া পল্টনের বিএনপি কার্যালয় অবরুদ্ধ

‘ডু-নট ক্রস ক্রাইম সিন’ লেখা হলুদ ট্যাপে দিয়ে কার্যালয় তিন দিক ঘিরে রাখা হয়েছে। দুই প্রান্তে এক স্তরের পুলিশ অস্ত্র হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট তালা লাগানো।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিএনপির অফিস এখন সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের নিয়ন্ত্রণে। এখানে তারা তদন্ত কাজ করছেন।

এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লাইট পোস্টগুলোতে নতুন করে আরও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে মই দিয়ে নতুন ক্যামেরা স্থাপন করছেন টেকনিশিয়ানরা।

নয়া পল্টনের সড়কে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল করছে। পথচারীদের কার্যালয়ের সামনে ‘ক্রাইস সিন’ বেষ্টনী ঘুরে যেতে হচ্ছে।

গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পর গভীর রাতে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ করে দিয়ে সিআইডি তদন্ত কাজ শুরু করে।

কার্যালয়টি বন্ধ হয়ে পড়ায় নেতাকর্মীদের এই এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। রোববার ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে সরেজমিন তদন্ত এসে ১১টি আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। ক্রাইম সিন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তারা আলামতগুলো পরীক্ষা করতে কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ