মুন্সীগঞ্জ থেকে দুইশ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়ে যেতেন ফাতেমা বেগম। গতকাল তাকে আসতে হয়েছে তিনবার সিএনজি বদল করে। খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। অবরোধের কারণে বাস স্টেশনে কোনো বাস না পাওয়ায় তাকে সিএনজিতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আসতে হয়। এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন ফাতেমা বেগম। তিনি জানান, অবরোধের কারণে এই বাড়তি খরচ ঊর্ধ্বমুখী পণ্যের বাজারে তাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসেছেন নারায়ণগঞ্জের মাইদুল হক। তার ছোট ছেলে জ্বরে ভুগছেন পাঁচ দিন যাবত। স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা নেয়ার পর সুস্থ না হওয়ায় ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তার দেখাতে বলেছেন। অবরোধের কারণে মাইদুল হকের হাসপাতালে আসতে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার বাসার সামনে থেকে ঢাকা মেডিকেলের সামনে দিয়ে যায় এমন কয়েকটি বাস ছেড়ে আসে। কিন্তু সকালে গিয়ে কোনো বাস পাইনি। রাস্তার কোথায় নাকি বাস ভাঙচুর হয়েছে, তাই বাসচালকরা বাস ছাড়ছেন না। বাধ্য হয়ে সিএনজি নিয়ে আসতে হলো। ৪০০ টাকার সিএনজি ভাড়া আসতে হলো ৭৫০ টাকা দিয়ে। ক্ষমতা নিয়ে লড়াইয়ের মাঝে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বলে নিজের ক্ষোভ ঝারলেন তিনি।
পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন কামরুল মিয়া। তার সাথে কথা বলতেই জানা গেলো, চলতি মাসের মাঝামাঝি ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্ত্রীর অপারেশন করিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি রওনা হয়ে দেখলেন অবরোধের কারণে গুলিস্তান টার্মিনাল থেকে বরিশালের উদেশ্যে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। তাই স্ত্রীকে নিয়ে সদরঘাটে এসে বসে আছেন। সদরঘাট থেকে দিনের বেলা বরিশালের উদ্দেশ্যে কোনো লঞ্চ না ছাড়ায়, সন্ধ্যায় ছেড়ে যাওয়া লঞ্চই এখন তাদের একমাত্র ভরসা।
তিনি বললেন, আমার স্ত্রী এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তাকে বাড়ি যাওয়া নিয়ে পড়েছি বিপদে। অ্যাম্বুলেন্স বা প্রাইভেটকারে যেতে প্রয়োজন আট থেকে ১০ হাজার টাকা। এ ব্যয় বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই।
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের ভোগান্তির প্রধান কারণ ছিল যাতায়াত ব্যবস্থা। রাস্তায় গণপরিবহন সংকট ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে রাজধানীতে কোনো গাড়ি না আসায় অসুস্থ রোগীদের নিয়ে অনেকে পড়েন বিপাকে। হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যাও ছিল স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম।
অবরোধের কারণে রোগীদের ভোগান্তি ও চিকিৎসা সংকট নিয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিমের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা উন্নত হয়নি। মানুষের রয়েছে আস্থা সংকট। মানুষ তাই অসুস্থ হলেই চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ছুটে আসে। আর হরতাল-অবরোধের সময়গুলোতে রোগীদের ভোগান্তির কোনো সীমা থাকে না। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বন্ধ করে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রয়োজন সংকট সমাধানের পথ খোঁজা। তা না হলে দেশের মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।