অবরোধে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

অবরোধে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

রাজধানীর জিপিও এলাকায় রিকশা নিয়ে অলস সময় পার করছেন মাইনুল মিয়া। রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা মানুষ দেখলেই জিজ্ঞেস করছেন। কোথায় যাবেন? কিন্তু যাত্রী পাচ্ছেন না। তার সাথে কথা বলতেই তিনি বললেন, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৬০ টাকার ভাড়া পেয়েছি। রিকশা মালিককে দিতে হবে ১২০ টাকা। দুপুরের খাবার এখনো খাইনি। অবরোধ না থাকলে দিনে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা রিকশা চালিয়ে আয় করতাম। অবরোধের কারণে তার ভিতরে কোনো আতঙ্ক কাজ করছে কি-না এমন প্রশ্ন করতে তিনি বলেন, গাড়িতে আগুন দেয় মারামারি হয় এসব দেখলে ভয় লাগে।

সায়দাবাদ এলাকায় কুমিল্লার দূরপাল্লার বাসে চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন আজিজ উদ্দিন। কয়েকজন মিলে এক সাথে লুডু খেলছেন। দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ায় তাদের কোনো কাজ নেই। কথা বলতেই তিনি জানালেন, আমরা বাস ছাড়লে প্রতি ট্রিপে একটা নির্দিষ্ট টাকা পাই। যতগুলো ট্রিপ হয় তত টাকা। কিন্তু অবরোধের কারণে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। একজনের কাছ থেকে ২০০ টাকা ধার করে সকালে আর দুপুরে খেয়েছি। এভাবে অবরোধ চললে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। বাড়ি ফিরে যাবো সে উপায়ও নেই। গাবতলী এলাকায় উত্তরবঙ্গের দূরপাল্লার বাসের টিকিট কাউন্টারে কাজ করেন মিজান। বাসমালিক সমিতির নির্দেশে কাউন্টার খুলে বসে আছেন। তিনি বলেন, যাত্রী নেই, সকাল থেকে দুজন যাত্রী এসেছেন। তারাও কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে গেছেন। দুজন যাত্রী নিয়ে তো আর বাস ছাড়া যায় না।

রাজধানীর সদরঘাট থেকে মিরপুর পর্যন্ত চলাচল করে বিহঙ্গ বাস। মালিকের নির্দেশে বাস নিয়ে বের হয়েছেন চালক রমিজ। তিনি বলেন, অবরোধের কারণে যাত্রী কম। বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন দেয়া হচ্ছে। আতঙ্ক নিয়েই আমরা বাস নিয়ে বের হয়েছি। চাকা না ঘুরলে পরিবার নিয়ে আমরা খাবো কি। আমরা অবরোধ চাই না। অর্থনীতি গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য বলছে, হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শুধুমাত্র রাজধানীতে নিম্ন আয়ের দুই লাখ মানুষ কর্মহীন থাকে। যাদের আয়ের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা। অবরোধের কারণে ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজারে নিম্ন আয়ের মানুষের দৈনন্দিন আয়ের ওপর প্রভাব সম্পর্কে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন বাংলাদেশ অর্থনীতির সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলামের সাথে।

তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি কাজের সংকট সৃষ্টি হয় দৈনন্দিন আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভর করা মানুষের ওপর আঘাত আসে এমন কর্মসূচি না দেয়া। পাশাপাশি এমন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কাজ না থাকা মানুষের পাশে সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষ তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে। এতে সমাজে বৈষম্য কমে আসবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন বলেন, বাসমালিকরা ঘোষণা দিয়েও বাস ছাড়ছে না।

এতে করে শ্রমিকরা বেকার বসে আছেন। ২০১৮ সালের শ্রমিক পরিবহন আইনে পরিবহন শ্রমিকদের পরিবহন মালিকরা নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। শ্রমিকরা এখনো চুক্তিভিত্তিক কাজ করছে। গাড়ি চাকা ঘুরলে তাদের আয় হয়, না ঘুরলে আয় হয় না। এদিকে আবার হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি শুনলে মানুষ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় জরুরি কাজ ছাড়া যাতায়াত করে না। এতো করে যাত্রী সংকটে বাসও ছেড়ে যায় না। শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ