বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান বদল হবে না, এমন ধারণা বিএনপির আগেই ছিল। তবে দলটি মনে করছে, গত দুই নির্বাচনের মতো এবার ঢাকায় ভারতের উপস্থিতি ততটা জোরালো ও প্রকাশ্য নয়। তবে চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের বিষয়ে দলীয় প্রতিক্রিয়া জানানো হলেও বিএনপি নেতারা মনে করছেন, ভারতের বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো তাঁদের জন্য ততটা সহজ নয়।
বিএনপিশুক্রবার দিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয় বলে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা জানান।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি আমরা। বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সে দেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’
শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বিএনপি নেতারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান শিগগির পরিবর্তন হবে না।
ভারত বর্তমান সরকারের সঙ্গে থাকলেও এবার আগের মতো সরাসরি মাঠ পর্যায়ে সংযুক্ত নয় বলে মনে হচ্ছে।
এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার নিয়ে চীন ও ভারতের সম্পর্ক শীতল হলেও বাংলাদেশের বিষয়ে দুই দেশের অবস্থান এক। এটা কেন এবং কিভাবে সম্ভব হচ্ছে তা নিয়েও বিএনপির মধ্যে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে দুই দেশ কিভাবে একবিন্দুতে এলো তা-ও বিশ্লেষণের চেষ্টা হয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একাধিক আলোচনায়।
দলের নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকগুলোয় উপস্থিত সূত্র থেকে জানা যায়, ভারত নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ নিয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করায় আওয়ামী লীগ স্বস্তি পাবে। তবে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ঘোষণায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ থাকাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি।
ভারতের বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবে কি না তা নিয়েও বিএনপিতে আলোচনা হয়েছে। কারণ সম্প্রতি ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত প্রায় একই রকম বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
তবে ভারতের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো নিয়ে নেতাদের মধ্যে ভিন্নমত আছে। নেতাদের কারো করো মত হলো, ভারতের বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির একটি কৌশলী প্রতিক্রিয়া আসা উচিত। কারো কারো মত, বিষয়টি কূটনীতিক পর্যায়ে আলোচনায় নেওয়া যেতে পারে।
বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিষয়ে চীনের একের পর এক বক্তব্যের জবাব দেওয়াটা যথার্থতা ছিল। তবে বিএনপির জন্য চীনের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়াটা যতটা সহজ, ভারতের বিষয়ে ততটা নয় বলে মত দেন একাধিক নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির একজন সদস্য বলেন, বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নীতি না বদলালে বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ ভারত তার অবস্থান জানিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তার সঙ্গে একমত হয়েছে এমন তথ্যও কোনো পক্ষ দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি প্রয়োগও শুরু করেছে। এখন বোঝা যাচ্ছে, এসব নিয়ে ভারত সন্তুষ্ট নয়।
বাংলাদেশের আগের দুটি নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন তৎপরতা ছিল না। এবার দেশটি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ দেখাচ্ছে। দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপও চোখে পড়ার মতো। ভারত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে চুপচাপ ছিল। চীন, রাশিয়া নির্বাচন নিয়ে একাধিকবার কথা বললেও ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেনি। ফলে এই সময় ভারত তার অবস্থান জানানো বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করার পর এখন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা। তারা এ-ও মনে করেন, আগের দুই নির্বাচন নিয়ে নীরব থাকা যুক্তরাষ্ট্র এবার সরব মানেই স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে তারা একটি শক্ত অবস্থান ধরে রাখবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বাংলাদেশে যেন আরেকটা ভোটারবিহীন নির্বাচন না হয়, সেদিকেও বড় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের খেয়াল রাখা উচিত। কোনোভাবেই এটিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জনগণের দাবিকে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।