জাপায় ফের প্রকাশ্যে দেবর-ভাবীর লড়াই

জাপায় ফের প্রকাশ্যে দেবর-ভাবীর লড়াই

আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির (জাপা) কর্তৃত্ব নিয়ে ফের প্রকাশ্যে দেবর-ভাবীর লড়াই শুরু হয়েছে। শনিবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি চিঠিতে এ বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।

জাপার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই মূলত দলের কর্তৃত্ব নিয়ে লড়াই শুরু হয় ভাই জি এম কাদের ও স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে। মাঝে এ লড়াই নিয়ে তেমন সাড়াশব্দ না হলেও সংসদ নির্বাচন নিয়ে ফের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এলো।

জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির জোট ভূমিকা কি হবে তা জানিয়ে শনিবার ইসিতে পৃথক পৃথক চিঠি দিয়েছেন এই দুই নেতা। এ ছাড়া মহাজোটের হয়ে মোট ৯টি দল নির্বাচন করতে চায় বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে, জাতীয় পার্টির নির্বাচনকালীন ক্ষমতা কার হাতে থাকবে-তা নিয়ে ফের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। জাপার পক্ষ থেকে দেওয়া আলাদা দুটি চিঠিতে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কার স্বাক্ষরে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন, নির্বাচন পরে জোটের ভূমিকা কি থাকবে এবং লাঙ্গল প্রতীক কে পাবেন এসব বিষয় উল্লেখ করে সিইসিকে জানানো হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর চিঠিতে বেগম রওশন এরশাদ জানান, ‘আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় এবারও চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা হবে শুধু নির্বাচনী জোট। নির্বাচনকালীন জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন।

তিনি আরও জানান, এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয় নির্বাচন করতে পারবেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।

অন্যদিকে একই দিনে সিইসিকে লেখা অপর এক চিঠিতে জাতীয় পাটির্র নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জোটের বিষয়ে জানিয়ে দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর স্বাক্ষর করা চিঠিটি ই-মেইলে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বরাবর পাঠানো হয়।

চিঠিতে চুন্নু জানান, গত ১৬ নভেম্বর ইসির উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত একটি ই-মেইল পেয়েছেন তিনি। সেই ই-মেইলের আলোকে আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, জাতীয় পার্টির (নিবন্ধন নং-১২) পক্ষ থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে আরওপিও অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতা প্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। অর্থাৎ তার দাবি নির্বাচন কমিশনারের পাঠানো ইমেইল অনুযায়ী জাতীয় পার্টির নির্বাচনকালীন ক্ষমতা থাকবে জি এম কাদের।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন ৯টি দল। এ বিষয়ে শনিবার ইসিকে দলগুলো চিঠি দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। শনিবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা নয়টি দল হলো- আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (রওশন এরশাদ), বিকল্প ধারা এবং তরীকত ফেডারেশন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা বাংলাদেশ মহাজোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান। সিইসিকে দেওয়া চিঠিতে তিনি জানান, বিকল্পধারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে নির্বাচনী প্রতীক হবে দলীয়। তবে পরে জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোটগত প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী তারা।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে এবারও নৌকা নিয়ে ভোটে লড়বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলটি (জাসদ)। যদিও জাসদের নিজের নির্বাচনী প্রতীক মশাল।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ