নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো কথা বলছেন না। তারা এক ধরনের নীরবতা নীতি অনুসরণ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে বাংলাদেশে তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। এই অবস্থান থেকে তারা সরে আসেনি। কিন্তু আগে যেরকম একটি সুষ্ঠু অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে তারা সরকারের ওপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করেছিল, সেই জায়গা থেকে নিঃসন্দেহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকখানি সরে এসেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের ওপর চাপ যে এখনও কমেনি তা বোঝা যায় একাধিক বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি এবং মনোভাব দেখে। যে বিষয়গুলোর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন অতি মনোযোগী হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে-
১. গার্মেন্টস ইস্যু: ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার আইন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোচ্চার হয়েছে। এর ফলে গার্মেন্টস শিল্প একটা বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা করছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে এটি সাধারণ আইন এবং সরকার শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় সচেতন। ৫৬ ভাগ বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাজেই শ্রমিক অধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কিন্তু বাংলাদেশের পোশাক খাতে যারা বিনিয়োগকারী এবং শিল্প উদ্যোক্তা তারা মনে করছে যে এটি একটি পরোক্ষ নজরদারি ৷ যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে পারে।
২. মানবাধিকার ইস্যু: বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ লক্ষ্য করা গেছে। যদিও জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার বিষয়ক বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের পর্যালোচনায় বাংলাদেশ উতরে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানবাধিকার অনেকগুলো বিষয়ই যুক্তরাষ্ট্র কড়া নজরদারিতে রেখেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কি থাকে, নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় কি না সেটি একটি দেখার বিষয়।
৩. বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং মামলা: বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং মামলার বিষয়টিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারিতে আছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনা গুলো যুক্তরাষ্ট্রের হিসেবের মধ্যে আছে। তারা এই বিষয়গুলোকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এসব নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনও পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সব বিষয়ে অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। তারা যথাসময়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবে।
৪. নির্বাচনের পরিবেশ: জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হচ্ছে সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এই সমস্ত পরিস্থিতির ব্যাপারে তারা নির্বাচনের আগে বা পরে কোন ধরনের মতামত বা অবস্থান জানাতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। আর
৫. গণমাধ্যমের অধিকার এবং তথ্য অধিকার: বাংলাদেশে গণমাধ্যমের অধিকার, বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে যে নতুন আইন করা হয়েছে, সেই আইনটির ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছে। এসব আইন এবং এই আইনের কার্যকারিতা কি, এই আইন কিভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং এর ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হচ্ছে কিনা এ বিষয়গুলোর দিকেও তারা নজর রাখছে।
অনেকে মনে করেন, যেহেতু নির্বাচন ইস্যুটিকে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অন্যান্য ইস্যুগুলো দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশে নির্বাচনের ব্যাপারে একটি অবস্থান জানানোর কৌশল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের নীরবতা লক্ষ্য করলেও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে কূটনৈতিক মহল মনে করে নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি। তারা আসলে দেখতে চায় যে, নির্বাচন কতটুকু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে এবং কিভাবে হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।