নিজস্ব প্রতিবেদক
ম্যাথিউ মিলার যেন সংবাদ সম্মেলনে বিরক্ত হলেন! বারবার বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের একই উত্তর দিতে দিতে তিনি যেন ক্লান্ত! আর এই বিরক্তি প্রকাশে রাখঢাক করলেন না মার্কিন এই কূটনীতিক। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি বহু আগেই। বলেছেন নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতের কূটনীতিকদের কথাটা ম্যাথিউ মিলারের কণ্ঠে উচ্চারিত দেখে হতবাক বিএনপিপন্থি সাংবাদিকরা। যারা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন। উস্কানিমূলক এবং সাংবাদিকতার রীতিনীতি বহির্ভূত বিভিন্ন প্রশ্ন করে বাংলাদেশের ব্যাপারে একটা নেতিবাচক উত্তর গ্রহণের চেষ্টা করতেন। এই চেষ্টায় তারা এতদিন সফলও হয়েছেন। কিন্তু এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউটার্ন করেছে। এ কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের এখন কোন আগ্রহ নেই। আর সেই অনাগ্রহের প্রতিফলন ঘটেছে ম্যাথিউ মিলারের বক্তব্যে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ইউটার্নে হতবাক হয়ে গেছে বিএনপি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতদিন ধরে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাত সরাসরি ভাবে। এই ম্যাথিউ মিলারই একাধিক ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে বাংলাদেশে তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায় এবং এই নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করবে। কিন্তু এখন তিনি অন্য সুরে কথা বলছেন। আজ ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। জনগণ যা প্রত্যাশা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তা প্রত্যাশা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের এই বড় ধরনের পরিবর্তন একটা সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
গত দুই বছর ধরে বিএনপির যে আন্দোলন তিলে তিলে গড়ে উঠেছিল, তা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাস এবং আশকারা কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যারপরনাই আগ্রহী ছিল এবং একাধিক মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশ সফর করেছেন। তারা সব সময় বলেছেন যে বাংলাদেশের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, সে সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। সব কিছু মিলিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল যে বিএনপির মধ্যে একটা ধারণা হয়েছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারণে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার টিকবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না করলে বাংলাদেশে অনেক বড় ধরনের ঘটনা ঘটবে। সে রকম একটা আশ্বাসের ভিত্তিতে বিএনপি এক দফা আন্দোলনে অটল ছিল। বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছিলেন এবং ২৮ অক্টোবর তারা তাণ্ডব করেছিল তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে তখন নাটকীয় পরিবর্তন করে ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি, অবস্থান এবং কৌশলে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস চলে যান বাংলাদেশ থেকে। তিনি কলম্বো হয়ে ওয়াশিংটনে গেছেন থ্যাঙ্কস গিভিং অনুষ্ঠানে পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য। তিনি কবে ফিরবেন সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসও রুটিন কাজের বাইরে তেমন কোনো তৎপরতা চালাচ্ছে না। অন্যদিকে পররাষ্ট্র দপ্তর এখন জানিয়ে দিল যে একই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তিনি ক্লান্ত এবং বিরক্ত বটে। আর এই বিরক্তি বিএনপিকে হতবাক করে দিয়েছে।
বিএনপির নেতারা মনে করেছিলেন যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেই বড় ধরনের লঙ্কা কাণ্ড ঘটাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই তফসিলের ব্যাপারে তারা সুস্পষ্ট অবস্থান নেবে এবং একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বাংলাদেশের নির্বাচনের পক্ষে। আর এর ফলে বিএনপির আন্দোলনই কেবল মুখ থুবড়ে পড়বে না। বিএনপির রাজনীতি যে একটা বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে তা মোটামুটি নিশ্চিত।