নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত মুখোমুখি অবস্থানে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের ইচ্ছারই জয় হলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অভিপ্রায় মেনে নিল। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনের যে আগ্রহ ছিল তা গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচন সেদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। তারা চায়, বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়িত হোক। এটুকু প্রত্যাশা সকল দেশের, সকল বন্ধুরাষ্ট্রের এবং বাংলাদেশের সঙ্গে যাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তাদেরও। আর তাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সহনীয় এবং সহনশীল অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তনের হাওয়া সূচনা করেছে।
প্রশ্ন হলো যে, ভারতে অভিপ্রায় যুক্তরাষ্ট্র কেন মেনে নিল? বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না। কারণ, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে টলটলয়মান জো বাইডেন প্রশাসন যদি ভারতে সঙ্গে বাংলাদেশের মতো ইস্যু নিয়ে একটি দূরত্ব তৈরি করে তাহলে তা পুরো বিশ্ব কূটনীতিতে রেখাপাত করতো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়তো। এ কারণেই তাদের সামনে যে বিকল্প ছিল সে বিকল্পের মধ্যে তারা ভারতের সহাবস্থানের নীতি বেছে নিয়েছে।
যেসব কারণে ভারতের জয় হলো বাংলাদেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের নীতি মেনে নিলো। তার মধ্যে রয়েছে-
১. মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু: মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় একলা হয়ে গেছে। এমনকি ইউরোপের দেশগুলো পর্যন্ত ইসরায়েলের আগ্রাসন এবং সামরিক তৎপরতাকে পছন্দ করছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যে একমাত্র ভারতই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে এবং ইসরায়েলের ব্যাপারে সহানুভুতি দেখাচ্ছে। গাজা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান অনেকটাই নমনীয়। আর এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখন একমাত্র শক্তি। আর তাই ভারত যেখানে বাংলাদেশের ব্যাপারে কোনরকম ছাড় দিতে রাজি নয়, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে নাক গলানোর নীতি থেকে সরে আসতে এক প্রকার বাধ্যই হলো। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির অনেকখানি নির্ভর করে। এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায়নি একলা হয়ে যেতে। তাই তারা ভারতে সঙ্গে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে চেয়েছে।
২. চীনের আধিপত্য: শেষ পর্যন্ত যদি উপমহাদেশে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্য বিরোধে জড়াতো তাহলে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতো চীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য বিধি-ব্যবস্থা কায়েম করতো, সেক্ষেত্রে লাভবান হতো চীন। কারণ, এর ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য আরও চীনের দিকে ঝুকে পড়তো। ফলে ভারতের সঙ্গে সহমত পোষণ করা ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না।
৩. বাংলাদেশের বাজার: শেষ পর্যন্ত যদি ভারতে সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ এই নির্বাচন করে ফেলতো তাহলে বাংলাদেশের কূটনীতি হতো রাশিয়া, চীন এবং ভারতকেন্দ্রীক। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মতো একটি বড় বাজার হারাতো। বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। এই বাজার যুক্তরাষ্ট্র কখনোই হারাতে চায়নি।
৪. বিএনপির অপতৎপরতা: বিএনপির রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেষ দিকে কিছুটা বিরক্তই হয়েছে। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তারা যে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে সেই ঘটনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ এটি নয়। আর এই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, বিএনপি তাদের সঙ্গে কথা রাখেনি। এই কারণেই তারা নির্বাচনের ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে।
৫. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা: বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে সেই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা কোনভাবেই এ দেশের জনগণ ইতিবাচকভাবে নেয়নি। এটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুভব করেছে। আর, এ কারণেই তারা শেষ পর্যন্ত ভারতের পরামর্শ শুনে বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে একটি নিরাপদ দূরত্বের অবস্থানে নিজেদেরকে প্রতিস্থাপিত করেছে। পাশাপাশি একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ, গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ নিয়ে ভারত যে কূটনীতি করেছে, সে কূটনীতির একটি বিজয় অর্জিত হলো বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে।