ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনি কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই দলটি নির্বাচনি তৎপরতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে দিয়েছে।
গত শনিবার থেকে টানা চারদিন দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে দলটি। তিনশ আসনের বিপরীতে ৩৩৬২টি ফরম ক্রয় করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটিসমূহের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের সমন্বয় সভা আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামীকাল দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনশ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বেশ কয়েকদিন লাগতে পারে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
৩৩৬২ ফরম কিনেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চার দিনে মোট ৩৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে অনলাইনে ১২১ জন ফরম কিনেছেন। এতে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা আয় হয়েছে দলটির। মনোনয়ন ফরম বিক্রির শেষ দিন (২১ নভেম্বর সন্ধ্যা) পর্যন্ত এসব ফরম বিক্রি হয়েছে। সন্ধ্যায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি জানান, আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বুথ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৩২৪১ জন। বাকি ১২১ জন অনলাইনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়ন ফরম বিক্রির চার দিনে (১৮-২১ নভেম্বর) কার্যালয় থেকে ঢাকা বিভাগে ৭৩০টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, সিলেট বিভাগ ১৭২টি, ময়মনসিংহ বিভাগ ২৯৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫৮টি, খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রংপুর বিভাগে ৩০২টি ও রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির সমন্বয় সভা আজ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটিসমূহের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের সমন্বয় সভা আজ অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৩টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভাটি হবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। এতে সভাপতিত্ব করবেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ওবায়দুল কাদের।
সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আগামীকাল : আগামীকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন বোর্ডের সভা সরকারি বাসভবন গণভবনে হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে রাজনৈতিক কোনো কাজ করবেন না বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন, ২৩ নভেম্বর বেলা ১১টায় এ সভা শুরু হবে।
চলমান নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদের সঙ্গে। আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পরপরই সমস্যা তৈরি হয়। আমরা নির্বাচনের আগে ক্ষমতা পরিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে অথচ একটি স্থায়ী নির্বাচনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি নির্বাচনকালীন সরকার কে বা কারা হবেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা কি হবে এবং নির্বাচন কমিশনের করণীয় নিয়ে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপি নির্দলীয় সরকার নেই বলে ভোটে অংশ নিচ্ছে না, আওয়ামী লীগও দলীয় সরকারের বাইরে যাচ্ছে না, এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কিছুটা নমনীয় হওয়া দরকার বলে মনে করেন ঢাবির এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে ভোট অংশগ্রহণমূলক হবে না আইনগতভাবে এমনটি বলা যায় না, তবে একটি বড় দল হিসেবে নৈতিক দিক থেকে বলা যায় বিএনপি না এলে ভোট অংশগ্রহণমূলক হবে না।
সূত্র জানা যায়, আওয়ামী লীগ চাচ্ছে বিএনপি ভোটে আসুক, সেটি দলীয় সরকারের অধীনেই। দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই বলেছেন বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল ভোটে আসুক। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিরোধী দলগুলোকে ভোটে আনতে আওয়ামী লীগের বিশেষ কোনো উদ্যোগ দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপিও দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে না যাওয়ার পূর্বের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।