সাত জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠিত হচ্ছে বিরোধীদলগুলো। তবে, মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এখনও নির্বাচন প্রশ্নে দলকে ঐক্যমতে নিয়ে আসতে পারেনি। তাই তৃণমূলের নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে নির্দেশনা না আসায়, তারা ঘোষণা দিতে পারছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের ভাগ্য নির্ধারণে যদি বিএনপি সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তবে তার কর্মী সমর্থকদের কী জবাব দেবে? গেলো পাঁচ বছরে আন্দোলনের প্রাপ্তি নিয়ে এরিমধ্যে হিসাব-নিকেশ শুরু করে দিয়েছে দলটির তৃণমূলের কর্মীরা। ২৮ অক্টোবরের সহিংস ঘটনা নিয়েও তাদের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আর মাত্র দেড় মাস বাকি। দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ভোটের পথে শামিল হয়েছে। পাইপলাইনে আরও আছে। আওয়ামী লীগ পুরোদমে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায় না হলেও, বিভিন্ন মহলের চাপে বিএনপিও নির্বাচনে আসতে চায়।
নানা দিকে দৌড়ঝাঁপ চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে শুধু নির্বাচন প্রশ্নে এক টেবিলে আনা যায় কীনা- সেই চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন মহল চাইছে, সমঝোতায় আসুক বিএনপি। যদি বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন ১৫ থেকে ২০ দিন পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণা করতে পারে।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাঠে এখন সক্রিয়। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণা সত্ত্বেও, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
এরই মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের মতো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনের নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দল- জাতীয় পার্টি বুধবার ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ৩০০ আসনেই দলটির প্রার্থীরা লড়বেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। দলীয় প্রতীক হিসেবে পেয়েছে নোঙর। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
যদিও তাদের তৎপরতা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত থেকে কিছু বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও দলের নেতারা বলছেন, কারও ইন্ধনে নয়, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হতেই নির্বাচনে যাবে, বিএনএম। এরই মধ্যে দলটিতে যোগ দিয়েছেন বিএনপি বেশ কয়েকজন ডাকসাইটে ও পরীক্ষিত নেতা।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বুধবার। আত্মপ্রকাশের দিনে দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে যুক্তফ্রন্ট। নতুন জোটে থাকা দলগুলো হলো– বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাত ঘড়ি প্রতীক), বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল (হাতপাঞ্জা), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল প্রতীক)।সংবাদ সম্মেলনে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, আমরা আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত হয়েছি।
তিনি বলেন, এর জন্য আমরা একটি বড় ঝুঁকি নিচ্ছি। অতীতেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে বড়-ছোট দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমরা মাঠে দাবি আদায়ে সফল না হয়ে, বিকল্প পন্থায় ভোটে অংশ নিয়ে অবদান নিতে চাই। আশা করছি, এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে ‘পেরে উঠছেন না’ জানিয়ে কল্যাণ পার্টির প্রধান বলেন, ১৬ বছরে অনেকেরই যোগ্যতা ও সাহস থাকার পরও সংসদে যেতে পারেনি। আমাদের সিদ্ধান্ত কারও পছন্দ হবে বা হবে না। আগামী কয়েক সপ্তাহ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সংকটময়।
ইবরাহিমের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠনের দু’দিন আগে খোদ বিএনপিতেই ভাঙন ধরেছে। দলটি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নেতৃত্বে এসেছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনএম।
এর আগে বিএনপির সাবেক দুই নেতাকে সামনে রেখে ২০২১ সালে ৭ জুলাই গঠিত হয় বিএনএম। দলটির আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আবদুর রহমান। বর্তমানে তিনি কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে আছেন। দলটি বলছে, শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগেরও অনেকে তাদের দলে আসবেন।
বিএনএম’র মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান বলছেন, শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক জনপ্রিয় নেতাসহ দেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ও সমাজে পরিচিতি রয়েছে এমন অনেকেই বিএনএমের আসতে চাচ্ছেন।
তিনি বলেন, যাদের আমাদের দলের নীতির সঙ্গে মিল রয়েছে, সৎ, সাহসী, নির্ভীক, দুর্নীতিমুক্ত, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা রয়েছে তাদেরই আমরা দলে রাখছি। দলছুট বা বাগাতে পারি বিষয়টা এরকম না। তবে এটা সত্য বিএনপি থেকে আপাতত বেশি আসছে এবং সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসছে।
বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, নির্বাচনের ট্রেনে উঠুন, আর না হয় কলার ভেলায় চড়ে সাগরে ভেসে যাবেন। বাংলাদেশে আর ‘৭৫ বা ‘৮২ বা ১/১১-এর মতো ভূতের সরকার, সামরিক সরকার হবে না।
বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি, আসবে না এমন পরিস্থিতিতে তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দলের অনেক নেতা বিভিন্ন দলে যোগ দিয়ে ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকা নেতাদের মধ্যে বেশ ক’জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ভোটে মাঠে সক্রিয় হয়েছেন।