সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, চাল আটা ডাল চিনি উচ্চমূল্যে স্থির।

সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, চাল আটা ডাল চিনি উচ্চমূল্যে স্থির।

শীতের হরেক রকম সবজিতে ভরে উঠেছে বাজার। পাইকারি পর্যায়ে কমেছে দাম। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। মাসখানেক আগের চেয়ে বেশ কম দামেই সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কমেছে ডিম ও মাংসের দামও। তবে আগে থেকে বেড়ে যাওয়া চাল-আটা, চিনি, ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য এখনও উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে।

ভোক্তারা বলছেন, শীত মৌসুমে সবজির দর আরও কম থাকার কথা। তবে সবজির দাম কমলেও চাল-আটা ও চিনির মতো অনেক নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে সীমাহীন কষ্টে স্বল্প আয়ের মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্যের দর ওঠা-নামার বিষয়টি নির্ভর করে চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। অন্যদিকে হরতাল-অবরোধে বাজারে ক্রেতাও কমেছে। সে জন্য দাম রয়েছে ক্রেতাদের নাগালেই।

মাসখানেক আগে বেশির ভাগ সবজির দর ছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কোনোটির দাম দেড়শ টাকাও ছুঁয়েছিল। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, আগারগাঁও, মালিবাগসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম, বেগুন, করলাসহ বেশ কয়েকটি সবজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। ফুলকপি প্রতিটা কেনা যাচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। কাঁচামরিচের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবজির কেজিতে পাইকারি দরের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকার ব্যবধান থাকছে খুচরা বাজারে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, সবজি পচনশীল পণ্য। পরিবহন ও অন্যান্য খরচের সঙ্গে মুনাফা হিসাব করলে ১০ থেকে ১৫ টাকা ব্যবধান থাকবেই।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. ইসরাফিল সমকালকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে কেনার পর কিছু সবজি পচে যায়। ভ্যান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ হিসাব করে খুচরা ব্যবসায়ীদের বিক্রি করতে হয়।

সবজির পাশাপাশি মুরগি ও ডিমের দামও কমতির দিকে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৭৫ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের দরও কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে। ডিমের ডজন এবার রেকর্ড ১৭০ টাকায় উঠেছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা দরে। মাছের দরে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।

আলুর দাম এখনও দ্বিগুণ

এ বছর বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে আলু। দুই মাস আগে সরকার খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হয়নি। অস্বাভাবিক দর বাড়ার কারণে সরকার বাজার তদারকি ও আমদানির উদ্যোগ নেয়। ভারত থেকে আলু আমদানির পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাজার। খুচরা পর্যায়ে এখনও ৫০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে সবজি জাতীয় এ খাদ্যপণ্যটি। যেখানে এক বছর আগে আলুর কেজি ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা।

পুরোনো আলুর পাশাপাশি নতুন আলু দেখা গেছে বাজারে। তবে দাম আকাশচুম্বী। প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। কারওয়ান বাজারের আলু ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, এখনও পাইকারিতে ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। সে জন্য ৫০ টাকার কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না।

চাল ডাল আটা চিনিতে অস্বস্তি

চলতি বছরের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু চালের বাজারে সেই প্রভাব দেখা যায়নি। মাসখানেক আগে সব ধরনের চালের দর বেড়েছিল। এখনও সেই দরেই বিক্রি হচ্ছে। মান ও বাজারভেদে মোটা চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৪, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬০ এবং সরু চালের কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই চিত্র রয়েছে আটার বাজারে। দুই-তিন সপ্তাহ ধরে আটা ও ময়দার দাম বাড়তি। এ সময় খোলা আটা কেজিতে ৫-৬ এবং প্যাকেট আটা কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বর্তমানে খোলা আটা কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে কেজিতে ৫০ টাকা। আর প্যাকেট আটার কেজি কিনতে খরচ হচ্ছে কমবেশি ৫৫ টাকা। একইভাবে খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ এবং প্যাকেট আটা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

দুই সপ্তাহ ধরে আবারও অস্থির চিনির বাজার। খুচরা দর ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও খোলা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। তবে প্যাকেট চিনি কোথাও বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

ভারত রপ্তানি মূল্য বেঁধে দেওয়ার পর দেশের বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা উঠেছিল। তবে ২০ টাকার মতো দাম কমে এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে ১৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকার আশপাশে।

গতকাল কারওয়ান বাজার থেকে ৫০ টাকা দরে খোলা আটা কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুল হাসান। তিনি সমকালকে বলেন, ‘সবজির দাম শীতের সময় যে পরিমাণে সস্তা হওয়ার কথা, সে তুলনায় হয়নি। কিন্তু চাল-আটার দামেই তো মানুষ দিশেহারা। চালের কেজি ৬০ টাকা। চিন্তা করা যায়– নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ দাম কত বেশি?’

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ