নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অর্ধশতাধিক নারীকে ‘ফাঁদে’ ফেলে জমি, গাড়ি-বাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন মো. বেনজির হোসেন (৪০) নামের এক ব্যক্তি। পাঁচ বছর ধরে এই প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। ফেসবুকে আকর্ষণীয় ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে অবিবাহিত ও ‘একক’ মায়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন বেনজির।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসির) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত বুধবার খুলনার ফুলতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেনজির হোসেনকে সিটিটিসি গ্রেপ্তার করে। সেদিনই তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, বেনজির হোসেন শাহিদ হাসান নামে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক বাংলাদেশির ফেসবুক প্রোফাইল হুবহু কপি করে একটি ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করেন। শাহিদ হাসান একজন পাইলট। বেনজির নিয়মিত শাহিদ হাসানের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও নামিয়ে নিজের ভুয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করতেন। তিনি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে প্রেমের ফাঁদ তৈরি করতেন। পরে বিয়ের প্রলোভন ও সপরিবার যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। তিনি সব সময় অডিও কলে নারীদের সঙ্গে কথা বলতেন। নানা অজুহাতে ভিডিও কল এড়াতেন। প্রেমের একপর্যায়ে কাগজপত্র প্রস্তুতের কথা বলে ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতেন। প্রতারণার কাজে আর্থিক লেনদেনের জন্য তিনি ১৩টি মোবাইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেন। সেসব অ্যাকাউন্টে গত এক মাসে ১ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, বেনজির নড়াইলে নিজের বাড়িতে বসে প্রতারণা করলেও বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনা জেলায় বিভিন্ন সময়ে গিয়ে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতেন। তাঁর ব্যবহৃত সিম এবং এমএসএফ অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত জাতীয় পরিচয়পত্র অন্য ব্যক্তির নামে।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে সিটিটিসি
আসাদুজ্জামান জানান, একজন ভুক্তভোগী নারী ২১ নভেম্বর ঢাকায় মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন বেনজির হোসেনের প্রতারণার শিকার হয়ে গত সাত মাসে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন বেনজিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই নারী একটি বেসরকারি ব্যাংকে আছেন। তিনি ভিটাবাড়ি বিক্রি করে, উচ্চ সুদে ঋণ করে বেনজিরকে এ টাকা দেন। বেনজির হোসেনের মুঠোফোনে ভুক্তভোগী ৫০ জনের বেশি নারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। টাকার লেনদেনে ব্যবহৃত তাঁর মোবাইল হিসাব নম্বরগুলো যাচাই করে দেখা যায়, তিনি তাঁদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেনজির উচ্চমাধ্যমিক পাস করে একটা চাকরিতে যোগ দেন। চুরির দায়ে সেই চাকরি চলে যায়। এরপর তিনি এ ধরনের প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন।
সিটিটিসি জানায়, গ্রেপ্তারের পর বেনজিরকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে গেলে বিশাল অট্টালিকা দেখা যায়। এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতারণার টাকায় গত কয়েক বছরে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। বেনজির ৫ বিঘা জমির ওপর ডুপ্লেক্স বাগানবাড়ি বানিয়েছেন। এ ছাড়া ৩ বিঘা জমির ওপর বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় আনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার এবং নড়াইলে, যশোর ও সাভারে তাঁর নামে বহুতল ভবনের সন্ধান পাওয়া গেছে।