নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাদের অবরোধে কেউ সাড়া দিচ্ছে না। অবরোধের সময় রাস্তায় রীতিমতো যানজট দেখা দিচ্ছে। অবরোধ-হরতালের ককটেল বানিয়ে তারা মানুষকে আরও বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। অবরোধ-হরতালের পার্থক্য কি—এ ব্যাপারে বিএনপির নেতারাই কিছু বলতে পারছেন না। কোনটা অবরোধ আর কোনটা হরতাল সে ব্যাপারেও বিএনপি নেতাদের এবং মাঠের কর্মীদেরও কোন সুস্পষ্ট ধারণা নেই। বিএনপির অধিকাংশ সিনিয়র নেতারা আত্মগোপনে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আত্মগোপনে থেকেই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আর অন্যান্য নেতারা যারা বাইরে আছেন, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে অর্থাৎ নিরাপদ স্থানে আত্মগোপন করে আছেন। সিনিয়র অধিকাংশ নেতা যারা মাঠের রাজনীতিতে সরব ছিলেন, যেমন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তারা সবাই এখন কারাগারে আছেন।
বিএনপির বহু নেতা ইতোমধ্যেই দণ্ডিত হয়েছেন এবং সহসাই তাদের মুক্তির কোন সম্ভাবনা নেই। এরকম একটি বাস্তবতায় বিএনপি যে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে এমন কোন সম্ভাবনার রেখা কেউ দেখছেন না। কিন্তু তারপরও বিএনপির মধ্যে এক ধরনের আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, এখনও সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি। তারা এখনও তাদের আন্দোলনের ব্যাপারে আশাবাদী। তারা বলছেন যে, ৭ জানুয়ারি অনেক দূর আছে। এরমধ্যে বাংলাদেশে অনেক কিছু ঘটবে। কিসের আশায় বিএনপি আছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি এখন কয়েকটা সুনির্দিষ্ট যদি, কিন্তু, তবে-এর ওপর নির্ভর করে আছে। তারা মনে করছে যে এমন কিছু ঘটনা ঘটবে যে ঘটনাগুলো বিএনপিকে পুনরুজ্জীবিত করবে এবং যার ফলে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ পর্যন্ত সরকার করতে পারবে না। যে সমস্ত অনুমানের ওপর দিয়ে বিএনপি আশায় বসে আছে তারমধ্যে রয়েছে;
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ: বিএনপি মনে করছে কোন না কোন একটি পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে। এ ধরনের একতরফা নির্বাচন তারা করতে দেবে না। কারণ এ ধরনের নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা তার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কোন না কোন পর্যায়ে সরব হবে। এটি বিএনপির নেতাদের অনেকের দৃঢ় বিশ্বাস। সেই আশায় তারা বসে আছে।
২. নির্বাচনে ভুল: যেভাবে এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তাতে নির্বাচনের মাঠে কারচুপির প্রতিযোগিতা হবে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ। প্রত্যেকটা মানুষের হাতে একটা করে স্মার্টফোন রয়েছে। একটা করে স্মার্টফোন একটা করে তথ্য বিস্ফোরণের যন্ত্র। আর এ সমস্ত দিয়ে যেমনটি করে লক্ষ্মীপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ভোট কারচুপি দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল, ঠিক তেমনই ভাবে এই নির্বাচনগুলোতেও যে কারচুপির চিত্র ধরা পড়বে এ ব্যাপারে বিএনপি নেতারা আশাবাদী এবং নিশ্চিত। তারা মনে করছে যে, এই ধরনের তথ্যগুলো যখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যাবে তখন এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার সঙ্কটে পড়বে এবং আওয়ামী লীগের এখন সেই অবস্থা নেই যে তারা কর্মীদের যেরকম নির্দেশ দেবেন কর্মীরা সেরকমই করবেন। বরং এই দলের বিভিন্ন নেতারা যেভাবে স্বতন্ত্র হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, তাতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের মধ্যেই একটা অনিয়ম করার প্রতিযোগিতা হবে। সেক্ষেত্রে এই নির্বাচন একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি পাবে না, তেমনি জনগণও প্রত্যাখ্যান করবে। তখন বিএনপির জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। এরকম আসায় বিএনপি বসে আছে এবং এজন্যই বিএনপি সবাইকে বলছে আরও অপেক্ষা করুন।