কর ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ী ধরতে গণ-অভিযান

কর ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ী ধরতে গণ-অভিযান

দেশের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই কর দেন না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রাথমিক জরিপে এমন তথ্য পেয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইসহ ছোট-বড় ব্যবসায়িক সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্যেরই নেই কর করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)। যাঁদের আছে, তাঁরাও ঠিকমতো আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। প্রাথমিক জরিপে এসব তথ্য পেয়ে এনবিআর কর ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ীদের এবার শক্ত হাতে ধরার নির্দেশনা দিয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব কর অঞ্চলকে বলা হয়েছে, অবিলম্বে রিটার্ন না দেওয়া ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ীদের তালিকা করে এনবিআরে পাঠাতে। ওই তালিকা মাঠপর্যায় থেকে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এনবিআরে পৌঁছাতে হবে। চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত শুধু ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ীই নন, রাজধানী থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেরও ছোট-বড় মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের তালিকাও আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এনবিআরের কর জরিপ, ফাঁকি ও আইটিপি বিভাগের দ্বিতীয় সচিবের সই করা এক নির্দেশনাপত্রে বলা হয়েছে, নতুন আয়কর আইন অনুযায়ী প্রতিটি কর অঞ্চলের আওতায় যত ধরনের শিল্প ও বাণিজ্য সংগঠন, ফাউন্ডেশন, সমিতি, সমবায় সমিতি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের সদস্যদের টিআইএন আছে কি না, টিআইএন থাকলে রিটার্ন জমা দেন কি না, না দিলে তাঁরা কারা এবং কতজন—এসব বিস্তারিত তথ্য নির্দিষ্ট ছকে এনবিআরকে জানাতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রেও নতুন আয়কর আইনে রিটার্ন জমার প্রত্যয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। সংগঠনগুলো তা মানছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেছে এনবিআর। তালিকা পর্যালোচনায় যাঁরা ফাঁকিবাজ হিসেবে চিহ্নিত হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আয়কর আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এবারই প্রথম সম্ভাব্য কর ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ীদের করের আওতায় আনতে এত গোছানো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংগঠনগুলো এখন তাদের সদস্যদের সদস্যপদ বহাল রাখতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রত্যয়নপত্র যাচাই করতে বাধ্য হবে।

এ ব্যাপারে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা এনবিআরের ভালো উদ্যোগ। দেশে ব্যবসায়ী আছেন কমপক্ষে ৩ কোটি। তাঁদের সবার টিআইএন নেই।’ এফবিসিসিআইয়ের সদস্য সংগঠনের সব সদস্যের টিআইএন আছে, এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, তবে অনেক সদস্য হয়তো রিটার্ন দাখিল করে না। এটা এনবিআর খুঁজে দেখতে পারে।

এনবিআর তালিকা করার সুবিধার্থে এফবিসিসিআইয়ের সদস্য সংগঠন হিসেবে ৮৩টি চেম্বার ও ৪০১টি অ্যাসোসিয়েশনের তালিকা সরবরাহ করেছে। কোন সংগঠন কোন কর অঞ্চল ও কর সার্কেলের আওতায়, এ রকম তথ্যও দেওয়া হয়েছে। এখন মাঠপর্যায়ের সব কর অফিসের কাজ হচ্ছে ওই তালিকা ধরে অভিযান চাালিয়ে প্রতিটি সংগঠনের সদস্যদের টিআইএন ও রিটার্ন জমার প্রত্যয়নপত্র যাচাই করা।

এ ব্যাপারে এনবিআরের আয়কর নীতির সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম  বলেন, ‘আপাতদৃষ্টে উদ্যোগ ভালোই মনে হচ্ছে। রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে সক্ষম সবারই করের আওতায় আসতে হবে। তবে সময়টা একটু খারাপ। মানুষ নানা রকম অস্থিরতার মধ্যে আছে।’

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ