সিলেটে নিজ দলের ভেতরেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের প্রায় সবকটিতে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন মনোনয়নবঞ্চিতরা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়পত্রও সংগ্রহ করেছেন তারা। কয়েকটি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত সব নেতা এক হয়ে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করারও চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে দলের এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মনোনয়ন প্রদানের দিন দলীয় প্রধান ডামি প্রার্থী হওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন তিনি। দলীয় প্রধানের এমন নির্দেশনা পেয়েই প্রার্থী হচ্ছেন তারা।
তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম নাদেল।
সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন তিনি। এদিকে, এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমি সিলেট-১ ও সিলেট-৩ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু একটিতেও পাইনি। তবে আমাদের নেত্রী বলে দিয়েছেন, যে কেউ চাইলে প্রার্থী হতে পারেন। তার নির্দেশনা পেয়েই দুটি আসন থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। নির্বাচন করার জন্য নেতা-কর্মী এবং এলাকার মানুষেরও চাপ রয়েছে।’
সিলেট-২: সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ আসনে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
সিলেট-৩: সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নবঞ্চিত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ আসনে নৌকা পেয়েছেন বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব। তবে মনোনয়বঞ্চিত হওয়া বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব এবং আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া সিলেট-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুর রকিব মন্টু। তিনি বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের চাপে, মানুষের ভালোবাসায় তাদের প্রতিদান দিতে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেব।’
এ আসনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ মুহাম্মদ মনির হোসাইনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।
সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. গোলাপ মিয়া। তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
সিলেট-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. আহমদ আল কবির।
সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এ ব্যাপারে সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘এলাকার মানুষের ভালোবাসার চাপে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছি।’
সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রনজিত চন্দ্র সরকার। টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এবার বাদ পড়েছেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন।
সুনামগঞ্জ-২ আসনে শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা। তিনি প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন দেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন। তিনি নির্বাচন করবেন কি না এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছু জানাননি।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে গত তিনটি নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। টানা দুবারের সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। এবার এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক এনামুল কবির এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক। এখানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
হবিগঞ্জ-২ আসনে তিনবারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। এ আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজ উদ্দিন শরীফ। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন মজিদ খান।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক আইন সম্পাদক সৈয়দ সায়েদুল হক ওরফে সুমন এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সৈয়দ সায়েদুল হক বলেন, ‘এলাকার ইতিহাসটা আমি বদলাতে চাই এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে চাই। এ কারণেই প্রার্থী হচ্ছি।’