যুক্তরাষ্ট্র কেন পাল্টে গেল

যুক্তরাষ্ট্র কেন পাল্টে গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে ফেলে দিতে চায়—এমন আলোচনা ছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত জাতীয় সংসদে বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো চায় না আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক। শুধু জাতীয় সংসদে নয়, এ কথা অন্তত দুটি বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে সেন্ট মার্টিন চায় এবং এই কারণেই বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে—এমন কথা বলা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগের নেতারা অত্যন্ত কঠোর ভাষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছিলেন। সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও পাকিস্তানের মতো হবে এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু গত দুই মাস ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন নমনীয় হতে শুরু করে এবং বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য বিবৃতির ছাড়া আর কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে যতবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়েছে, ততবার তিনি একই কথা বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। ব্যস এটুকুই। এর বাইরে তিনি কোন কথা বলেননি। বরং বারবার একই প্রশ্নে তিনি বিরক্ত হচ্ছেন। সর্বশেষ মার্কিন অবস্থানের পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গেল তাদের মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে সমস্ত দেশের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং যে সমস্ত দেশের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন আরোপ করেছে সেই দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর।

প্রশ্নগুলো উঠেছে যে, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন হলো। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিন মাস আগেই বাংলাদেশ নিয়ে অত্যন্ত সরব ছিল, তারা কেন নীরব হয়ে গেল? এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে;

১. বৈশ্বিক পরিস্থিতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সমস্ত দেশগুলোর ওপর গুরুতর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেই দেশগুলো এমনিতেই নানা রকম সঙ্কটে জর্জরিত। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অতীতের মতো সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার এমনকি ফিলিস্তিনের ওপর কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। এর প্রধান কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যে যে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ সেই যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নীতি এবং কৌশলে কিছু বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এ কারণেই হয়তো বাংলাদেশের ব্যাপারে তারা নমনীয় হয়েছে।

২. ভারতের ভূমিকা: বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের ভূমিকা খুব খোলামেলা স্পষ্ট। ভারত সব সময়ই বলেছে, বাংলাদেশের বিষয়টি বিষয় ভারতই সবচেয়ে ভালো জানে। কাজেই ভারতকে বাইরে রেখে বা ভারতের মতের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে হয়তো একমত প্রকাশ করেছে। অতীতেও বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। এখন আবার সেই অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কারণেই হয়তো বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পাল্টে গেছে।

৩. বাংলাদেশের কূটনীতি: গত কয়েক মাস ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকল্প কূটনীতিক চ্যানেল চালু করেছেন, যে কূটনীতিক চ্যানেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ভ্রান্ত ধারণা এবং নীতিগুলোর পোষণ করছিল সেগুলো ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং সেখানে হয়তো বাংলাদেশের বড় ধরনের অর্জন হয়েছে।

৪. কৌশলগত অবস্থান: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করেছে যে, কৌশলগত কারণে এখন বাংলাদেশের সঙ্গে বিরোধে যাওয়া ঠিক নয়। বিশেষ করে নেতৃত্বহীন বিএনপি বা বিকল্প রাজনৈতিক দল না থাকায় আওয়ামী লীগকে এই মুহূর্তে ক্ষমতা থেকে হটানো সঠিক হবে না। এধরনের চেষ্টা করলে সরকারের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। ফলে ভবিষ্যতে ব্যবসা বাণিজ্য সঙ্কুচিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তার বাজার হারাতে চায়নি। এ কারণেই হয়তো তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।

৫. নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখতে চাইছে যে নির্বাচন কেমন হয়, যা কিছু করার সেটি নির্বাচনের পরে করবে। এরকম একটি কৌশল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সব কিছুকে এড়িয়ে চলছে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ