নিজস্ব প্রতিবেদক
মানবাধিকার দিবসের আগে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল বিএনপি। তারা মনে করেছিল যে, ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের আগে বাংলাদেশে অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আসবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটির ফলে নির্বাচন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে, সরকার বিপদে পড়বে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ধরনের শঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে মার্কিন ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস এবং ইউনিভার্সাল ডিক্লেরেশন অফ হিউম্যান রাইটসের ৭৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেই বিবৃতিতে ১২টি দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেই তালিকায় বাংলাদেশ নেই। এটি সরকারের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর হলেও বিএনপির জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা।
যে সমস্ত দেশের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- আফগানিস্তান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, হাইতি, ইরান, লাইবেরিয়া, চীন, সাউথ সুদান এবং উগান্ডা। এই সমস্ত দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ১২টি দেশের দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আর এর প্রেক্ষিতেই মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, এরকম জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটল।
বিএনপি গত দুই বছর ধরে যে আন্দোলন করছে সেই আন্দোলনে তাদের মূল নির্ভরতার জায়গা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা মনে করেছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একতরফা নির্বাচন মেনে নেবে না। নির্বাচনের আগে নানা রকম হস্তক্ষেপ করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সরকারকে বাধ্য করবে এবং সরকার যদি শেষ পর্যন্ত কথা না শোনে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্যাংশন আরোপ করবে। আর ২৮ অক্টোবর তাণ্ডবের পর বিএনপি সব সময় অপেক্ষা করে ছিল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আসলে তারা আন্দোলনে জয়ী হবে। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে বিএনপি অবরোধ হরতালের মতো কর্মসূচি দেয়নি। বরং মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছে প্রেস ক্লাবের সামনে।
বিএনপির নেতারা বলছিলেন যে, ১০ ডিসেম্বর বড় ধরনের সুখবর আসছে। কিন্তু এই সুখবর তাদের জন্য দুঃসংবাদ হয়ে দাঁড়াল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর এটি স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আপাতত নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা বা হস্তক্ষেপ দেবে না। শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয়গুলোকে আস্তে আস্তে উপেক্ষা করবে। এখন স্পষ্ট হয়ে গেল যে নির্বাচনকে বাধা দান বা নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক অবস্থান এখন আর তেমনটি নেই। এটি বিএনপির জন্য একটি বড় ধরনের আঘাত। এটি গতকাল ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর বিএনপির মধ্যে নেমে এসেছে হতাশা অন্ধকার।