আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক উত্তাপ ততই বাড়ছে। প্রার্থী চূড়ন্ত না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা অপরাধের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যতটা আনন্দের অনুভূতি জাগে, তার চেয়ে বেশি জাগে ভয়ের অনুভূতিও। আর এ ভীতি হলো নির্বাচনকালীন ও তার পরবর্তী সহিংসতা, লুটপাট, চাঁদাবাজি, মাদকের আসর, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, ঘরবাড়ি-দোকানপাট, ভিটেমাটিতে অগ্নিসংযোগের। দেশে নির্বাচনকালীন ও তার পরবর্তী সহিংসতা যেন ক্রমেই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। গত ১১ টি নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সহিংসতার চিত্র দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। নির্বাচনকালীন সহিংসতা বন্ধে কোনো রাজনৈতিক দল কখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, এমনটিই মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে!’ বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন ও পরবর্তী সহিংসতার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেই— এমনটি অস্বীকার করা যায় না। কোনো দলই নির্বাচনি ইশতেহারেও এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করে না।
সূত্র মতে, গত একাদশ জাতী??য় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর দিন থেকে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত ২১ দিনে সারা দেশে ২২ জন নিহত ও ২১৭৯ জন আহত হয়েছিলেন। শুধু ভোটের দিন সহিংসতায় ২১ দিনকে ছাড়িয়ে ওই ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জন নিহত ও ৪৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। অতীতে নির্বাচনকালীন সহিংসতায় নিহত কিংবা নির্যাতনের শিকার হওয়া কেউই বিচার পাননি। এ ছাড়া অনেকেই প্রতিপক্ষের হামলায় বাড়িঘর হারিয়ে সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু সেসব ঘটনারও তেমন কোনো বিচার হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা অসম্ভব।
অনেক নেতা বলেন, পূর্বশত্রুতার কারণে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে নির্বাচনকে মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়ে এ ধরনের সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে অনেক অপরাধী। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ক্ষয়ক্ষতি ঠিক কত তা নিশ্চিত হওয়ায়ও যাচ্ছে না। কারণ, এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান কোথাও নেই। কেবল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত আংশিক খবর জানা যায়। প্রতিবারই দেখা যায়, জাতীয় নির্বাচনের পর প্রভাবশালী দল কর্তৃক প্রতিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের জন্য এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। এ কারণে অনেকে গ্রাম ছেড়ে কিংবা কেউ দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তাই এবার নির্বাচনের পর প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিস্তারিত